মৃত ভেবে কবর, এখনও বেঁচে আছে গুলিবিদ্ধ রিফাত
বাঁচার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন ডাক্তাররা। স্বৈরাচার সরকারের বুলেট মাথায় নিয়ে আশুলিয়াতে ছাত্র আন্দোলনে রিফাত হোসেন ২০ দিনেরও বেশি সময় হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন। এমনকি বলতে পারেননি নিজের ঠিকানাও। মা বাবা জেনেছিলেন, তাদের সন্তান মৃত। পুড়ে যাওয়া ছাত্রদের একজনকে নিজের সন্তান ভেবে কবরও দিয়েছিলেন তারা। তারপরই শুনতে পান, মাথায় গুলিবিদ্ধ রিফাত এখনো বেঁচে আছে। এরপর শুরু হয় নতুন এক যুদ্ধ।
৫ আগস্ট পুলিশ আশুলিয়াতে ছাত্রদের গুলি করে লাশ পুড়িয়ে দেয়। এমন নির্মমতার মধ্যেও, কিছু গল্প আছে, হার মানায় যে কোনো সিনেমাকেও। আশুলিয়াতে ছেলে পুলিশের গুলিতে মারা গেছে, এমন খবরে দিশেহারা মা-বাবা, এক পোড়া লাশ নিজের ছেলে বলে শনাক্ত করেন। শোকাহত মা-বাবা, স্বজনরা সেই লাশ বগুড়ার গাবতলীতে নিজেদের গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান, পরম আদারে কবরও দেন তাকে।
কিন্তু দিন গড়ালে, সাভারের এক হাসপাতাল থেকে, হঠাৎই ছেলে রিফাত এখনো বেঁচে আছে, সেই খবর পৌঁছায় বাবা-মায়ের কাছে। শুরু হয় আশা-নৈরাশ্যের এক নতুন যুদ্ধ। কারণ, মাথায় বুলেটবিদ্ধ রিফাত তখন জীবন-মৃত্যুর দোলাচলে। ব্যথানাশক ওষুধ প্রয়োগ আর হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ছোটা, এই হচ্ছে হতভাগা রিফাতের দিনলিপি। কারণ, এমন ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে রাজি হচ্ছেন না কেউ।
বুলেট সরালেই মৃত্যুর প্রবল ঝুঁকি জেনেও সদয় এক চিকিৎসক শেষ চেষ্টাটা করলেন। দীর্ঘ কয়েকঘণ্টার অপারেশন শেষে বুলেট বের করা হলো রিফাতের। বাবা-মা জানলেন, তাদের আদরের সন্তান সুস্থ রয়েছে।
রিফাতের মা-বাবা সন্তান ফিরে পেলেন ঠিকই। কিন্তু তাদের মনে প্রশ্ন ও হাহাকার, যাকে তারা কবর দিলেন, আগস্ট বিপ্লবের শহীদ সেই যুবক কার সন্তান? তবে কী আরও অসংখ্য সন্তানহারা পিতামাতা এখনো হন্যে হয়ে খুঁজছে তাদের আদরের সন্তানকে?