পাহাড়ে চলছে কঠিন চীবর দানোৎসব
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/11/26/photo-1448554693.jpg)
বান্দরবানের পাহাড়ে চলছে কঠিন চীবর দানোৎসব। পুণ্যের আশায় কঠিন চীবর দানোৎসবে পাহাড়ের বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীরা এক রাতের মধ্যে তুলা থেকে চরকায় ঘুরিয়ে সুতা কেটে সেই সুতায় রং লাগিয়ে কাপড় বুনে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধানের জন্য তৈরি করেন চীবর (কাপড়)।
পরের দিন নতুন সুতায় তৈরি করা চীবর ভিক্ষুদের মাঝে দান করার নামই হচ্ছে কঠিন চীবর দানোৎসব। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বান্দরবানে পুরাতন রাজবাড়ি মাঠ থেকে কঠিন চীবর দানোৎসবের শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহর ঘুরে কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে গিয়ে শেষ হয়।
এর আগে বুধবার রাতে বান্দরবানের কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারে তিনদিনব্যাপী কঠিন চীবর দানোৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পার্বত্যাঞ্চলের অন্যতম বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু কেন্দ্রীয় বিহারের অধ্যক্ষ উচহ্লা ভান্তে, জেলা ও দায়রা জজ শফিকুর রহমান, পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্যশৈহ্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু জাফর, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিনসহ সরকারি ও বেসরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা।
প্রচলিত আছে গৌতম বুদ্ধের মহা পুণ্যবতী নারী বিশাখা দেবী এই কঠিন ব্রত পালন করে বুদ্ধকে চীবর দান করেছিলেন। সেই থেকে প্রতিবছর বান্দরবানেও বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহারে ব্যাপক আয়োজনে কঠিন চীবর দানোৎসব ধর্মীয়ভাবে পালন করে আসছে পাহাড়ের বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দা হ্লাচিংনু মারমা ও ভাগ্যবতী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ‘একরাতের মধ্যে না ঘুমিয়ে তুলা থেকে সুতা তৈরি করে নতুন সুতায় কাপড় বুনে চীবর তৈরি করি। বুদ্ধ ভিক্ষুদের পরিধানের যোগ্য করে চীবরগুলো ভিক্ষুদের মাঝে দান করব এটি হচ্ছে কঠিন চীবর দানোৎসব। আমরা বিশ্বাস করি জীবনে একবারও যদি আমরা ভিক্ষুদের চীবর তৈরি করে দান করতে পারি, তাহলে আমরা পরবর্তী বুদ্ধ যিনি আবির্ভাব হবেন আগামী জনমে আমরা তারই পুণ্যার্থী হবো।’
এদিকে কঠিন চীবর দানোৎসবে পাহাড়ের বৌদ্ধ বিহারগুলোতে পঞ্চশীল প্রার্থনা এবং প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়। আগামীকাল শুক্রবার কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহার থেকে প্রধান ভিক্ষু উচহ্লা ভান্তের নেতৃত্বে শতাধিক বৌদ্ধ ভিক্ষু খালি পায়ে লাইন ধরে হেঁটে উজানীপাড়া-মধ্যমপাড়াসহ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এলাকাগুলো থেকে ছোয়াং (খাবার) এবং নগদ টাকা-কাপড় সংগ্রহ করবেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের ছোয়াইং দানের মধ্য দিয়ে শেষ হবে কঠিন চীবর দানোৎসব সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উচহ্লা ভান্তে।