খালেদা জিয়া না আসায় চলে যাচ্ছি : কাজল
এজলাসে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্য অপেক্ষা করে চলে গেলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আজ বুধবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তিনি পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত ছেড়ে যান। এ আদালতেই দুটি মামলায় খালেদা জিয়ার বিচার কার্যক্রম চলছিল।
যাওয়ার সময় মোশাররফ হোসেন কাজল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে খবর ছিল, উনি (খালেদা জিয়া) আসবেন। তাই আমরা অপেক্ষা করেছি। কিন্তু না আসায় চলে যাচ্ছি।’
কাজল এনটিভি অনলাইনকে জানান, আলিয়া মাদ্রাসার অস্থায়ী জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদারও এজলাসে ছিলেন। এখন আর ১৫ মিনিট আছে, এর মধ্যে তিনি আর আসার সম্ভাবনা নেই।
এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, তাঁদের কাছে এমন খবর রয়েছে, খালেদা জিয়া আজই আত্মসমর্পণ করতে পারেন। বিকেল ৪টায় আরাফাত রহমান কোকোর চেহলামের মোনাজাতের পর তিনি কার্যালয় থেকে বের হতে পারেন। এজন্য তাঁদের আদালতে থাকতে বলা হয়েছে।
ওই সময় দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘আমি আলিয়া মাদ্রাসার অস্থায়ী জজ আদালতে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আছি। এ সময় পর্যন্ত বিচারকও থাকবেন।’
তবে খালেদা জিয়ার আদালতে আত্মসমর্পণের বিষয়টি উড়িয়ে দেন তাঁর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ ধরনের কোনো খবর আমার কাছে নেই।’
বিএনপির চেয়ারপারসনের আরেক আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘এ ধরনের খবর সঠিক নয়। তিনি (খালেদা জিয়া) আসছেন না।’
এর আগে দুপুরে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের মামলার শুনানি আগামী ৫ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেন আদালত। তবে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রাখেন।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহার, জামিন বহাল, সাক্ষ্য পেছানো ও আদেশ সংশোধনের আবেদনের পর শুনানি শেষে বিচারক আবু আহমেদ জমাদার এ আদেশ দেন। তিনি পর্যবেক্ষণে বলেন, আদালতে হাজির হলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
খালেদা জিয়ার পক্ষে আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও ব্যারিস্টার এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানিতে অংশ নেন।
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নথিভুক্ত করার বিষয়ে সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমাদের আবেদন খারিজ করা হয়নি। আবার মঞ্জুরও করা হয়নি। এটি নথিভুক্ত করা হয়েছে।’
দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘যেহেতু গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে আবেদনটি মঞ্জুর করা হয়নি, নথিভুক্ত করা হয়েছে, ফলে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বহাল রয়েছে।’
খালেদা জিয়ার পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ আলী শুনানিতে বলেন, ‘খালেদা জিয়া নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে হাজির হতে পারেননি। এর আগে তিনি যখন আদালতে এসেছেন, সেদিন তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে। যে কারণে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় আদালতে হাজির হতে পারেননি। এর আগে তাঁর অনুপস্থিতিতেই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ ও মামলার কার্যক্রম চলছিল।’
আদালতকে উদ্দেশ করে মোহাম্মদ আলী বলেন, আইনজীবীর মাধ্যমে তিনি প্রতিবারই আদালতে হাজিরা দিয়েছেন। কিন্তু হাইকোর্টে এ-সংক্রান্ত আবেদন বিচারাধীন থাকা অবস্থায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা আইনের পরিপন্থী।
এ সময় খালেদা জিয়ার এ আইনজীবী বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আদেশে খালেদা জিয়া ৬৩ বার অনুপস্থিত ছিলেন বলে যে কথাটা উল্লেখ করেছেন, তা সঠিক নয়; বরং ভুল তথ্য দেওয়ার কারণে সংবাদমাধ্যমগুলো বিষয়টিকে খারাপভাবে লুফে নিয়েছে।
১৯৫৩ সালে ভারতের একটি মামলার উদাহরণ দিয়ে মোহাম্মদ আলী বলেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। সুতরাং গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ন্যায়সঙ্গত নয়। সে সঙ্গে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন জানান তিনি।
অন্যদিকে, দুদকের পক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে কোনো আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর এ ধরনের আবেদনের সুযোগ নেই। আসামিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করে অথবা গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করার পর এ বিষয়ে শুনানি হতে পারে। যেহেতু আসামি আত্মসমর্পণ করেননি কিংবা তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, সেহেতু আবেদন বাতিল করা হোক।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দুর্নীতির দুটি মামলায় জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে খালেদা জিয়াসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার। একই সঙ্গে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় আদালতে হাজির না হওয়ায় তারেক রহমানকে ৪ মার্চ আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

নিজস্ব প্রতিবেদক