‘১৪ বছর পর ভোটাররা ধানের শীষ পেয়েছে’

‘ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। মানুষ ১৪ বছর পর ধানের শীষ প্রতীক পেয়েছে। তারা ব্যাপক আগ্রহী এ নিয়ে। ভোট সুষ্ঠু হলে আমি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।’
পৌরসভা নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে এসব কথা বলেন খুলনার চালনা পৌরসভার বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী শেখ আবদুল মান্নান।
বিএনপির এ প্রার্থী বলেন, চালনায় নির্বাচনের পরিবেশ ভালো। দলীয় নেতাকর্মীদের হয়রানি বা হুমকির কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। নির্বাচিত হলে কর বৃদ্ধি না করা, পৌরবাসীকে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ধানের শীষের এই প্রার্থী।
দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় একটা বাড়তি উৎসাহ আছে খুলনার চালনা পৌরসভায়।
সেখানে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন সনৎ কুমার মণ্ডল। আর বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন শেখ আবদুল মান্নান। এর বাইরে বর্তমান পৌর মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। তিনিও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং চালনা কলেজের অধ্যক্ষ। ভোটারদের ধারণা, মূল লড়াই এ তিনজনের মধ্যেই হবে।
চালনা পৌরসভার আয়তন ৯ দশমিক ৪৯ বর্গকিলোমিটার। মোট ভোটার ১০ হাজার ৭১১ জন। ২০০৪ সালে ১৩ নভেম্বর যাত্রা শুরু হয় ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত এ পৌরসভার। বার্ষিক আয় মাত্র ৬০ লাখ টাকা। আর লোকবল মাত্র ১০ জন।
এরই মধ্যে জোর প্রচারে নেমে পড়েছেন প্রার্থীরা। দলীয় সমর্থকদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তাঁরা। চেষ্টা করছেন উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয়ের। আছে প্রার্থীদের মধ্যে বাকযুদ্ধও।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সনৎ কুমার মণ্ডল দলীয় প্রতীক ‘নৌকা’ পাওয়াকে ‘প্রাথমিক বিজয়’ হিসেবে দেখছেন। গত পৌর নির্বাচনে বর্তমান মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডলের কাছে সামান্য ভোটে পরাজিত হন। তিনি বলেন, ‘এলাকার ভোটাররা নৌকা দেখে ভোট দেন, প্রার্থী দেখে নয়। এটা নৌকা মার্কার এলাকা।’ তবে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘বর্তমান মেয়র শেষ পর্যন্ত ভোট কিনে পরিবেশ নষ্ট করতে পারেন।’
তবে ভোট কেনার মতো পয়সা নিজের নেই বলে মন্তব্য করেছেন বর্তমান মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল। তিনি অভিযোগ করেছেন ভোটের পরিবেশ নিয়ে। তাঁর অভিযোগ, আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাঁর সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। তাঁর পক্ষে নির্বাচন করলে মামলায় জড়ানোর ভয় দেখানো হচ্ছে। আর এসবের জন্য অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল দায়ী করেছেন দাকোপ উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ আবুল হোসেনকে।
বর্তমান মেয়র বলেন, ‘উপজেলা চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারের জন্য যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই লোকজনকে ভূরিভোজ করাচ্ছেন। তিনি আমার কর্মীদের বলছেন, অচিন্ত্যর সঙ্গে ঘুরলে ১০টা করে নাশকতার মামলা দেওয়া হবে। রিপন নামের আমার এক সমর্থকের মায়ের কাছে গিয়ে বলেছেন, ছেলেকে যদি মুক্ত রাখতে চাও, তাহলে অচিন্ত্যর সঙ্গে ঘোরা বন্ধ করতে বলো। না হলে মামলায় মামলায় জীবনভর জেলে থাকতে হবে।’
অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা দাবি করে বলেন, ‘১৯৯৬ ও ২০০১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর প্রস্তাবক ছিলাম আমি।’
তবে দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন বলেন, ‘মেয়র অচিন্ত্য কুমার মণ্ডল আওয়ামী লীগের কেউ নন। মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে তিনি পৌরবাসীকে এক গ্লাস পানিও দিতে পারেননি। এলাকায় একটি লাইটও জ্বালাতে পারেননি। একটি পৌর ভবন ছাড়া পৌরসভার আর কিছুই নেই।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের এ সভাপতি বর্তমান মেয়রকে ‘দুর্নীতিবাজ’ হিসেবেও আখ্যা দেন।