আজ পাহাড়ে উড়েছিল লাল-সবুজের পতাকা
তখনো বিভক্ত ছিল না পাহাড়। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি আর বান্দরবান নিয়েই গঠিত ছিল একীভূত পার্বত্য চট্টগ্রাম। সারা দেশের মতো ১৯৭১ সালে পার্বত্য এলাকার সাহসী তরুণরা দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে।
১৭ ডিসেম্বর ফেলে যাওয়া প্রিয় শহর রাঙামাটিতে প্রবেশ করেন তাঁরা এবং তৎকালীন সবচেয়ে বড় মাঠ পুরাতন কোর্ট বিল্ডিংয়ের মাঠে উড়িয়ে দেন স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা। সেদিন পতাকা উড়িয়েছিলেন রাঙামাটির দুই তরুণ মনীষ দেওয়ান ও শামসুদ্দোহা।
মনীষ দেওয়ান সেদিনের স্মৃতিচারণ করে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ভারতের দেমাগ্রী হয়ে বাংলাদেশের বরকল সীমান্ত দিয়ে দেশে প্রবেশ করছিলাম আমরা, এমন সময় মেসেজ এলো দেমাগ্রী ফেরত যাওয়ার, নির্দেশমতো তাই করলাম। সেখানে গিয়ে দেখি, রাঙামাটিরই কিছু মুক্তিযোদ্ধা। এঁদের মধ্যে ছিলেন শামসুদ্দোহা ভাই, সিদ্দিক ভাই, রাব্বানী ভাইসহ বেশ কয়েকজন।’
মনীষ বলেন, ‘আমাদের নির্দেশ দেওয়া হলো, রাঙামাটি প্রবেশ করার পর নানিয়ারচর-মহালছড়ির মাঝামাঝি একটি পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে একটি অপারেশন চালাতে হবে, যেখানে প্রায় ২০০ পাকিস্তানি সেনা আছে। কিন্তু রাঙামাটি প্রবেশের সময়েই পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার মুখে পড়ি আমরা। ১৫ ডিসেম্বর রাতভর পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ চলে। ১৬ তারিখ সকাল পর্যন্ত চলে যুদ্ধ। ১৬ ডিসেম্বর রাতে আমরা ফুরোমন পাহাড়ে রাত্রিযাপন করি। যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। পরে তারা লঞ্চযোগে কাপ্তাই হয়ে পালিয়ে যায়।’
‘১৭ ডিসেম্বর বিনা বাধায় আমরা রাঙামাটি প্রবেশ করি। সেখানে পুরাতন কোর্ট বিল্ডিং মাঠে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করি। ওই দিন দুপুর ২টায় ওই মাঠে শেখ ফজলুল হক মনি আগরতলা থেকে হেলিকপ্টারে করে আসেন এবং সেখানে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার সুজান সিং ওভান,’ যোগ করেন পাহাড়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলনকারীদের একজন মনীষ দেওয়ান।