কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচনে সরব নারীরা
সমুদ্র উপকূলীয় পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে পুরুষ ভোটারদের সঙ্গে অধিকার আদায়ে সরব নারী ভোটাররা। নিজের ভোট যোগ্য ব্যক্তিকে দিতে তাঁরা অংশ নিচ্ছেন প্রার্থীদের প্রতিটি উঠান বৈঠকে। মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের পক্ষে প্রচারাভিযানেও অংশ নিচ্ছেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত। উঠান বৈঠকে জানতে চাচ্ছেন বিজয়ী হলে নারী উন্নয়নে তাঁরা কী কী পদক্ষেপ নেবেন।
কলাপাড়া পৌরসভায় পুরুষ ভোটারের চেয়ে ৫২ জন নারী ভোটার বেশি। ১১ হাজার ২৬ ভোটারের মধ্যে পুরুষ ভোটার পাঁচ হাজার ৪৮৭ এবং নারী ভোটার পাঁচ হাজার ৫৩৯ জন। তাই এই নারী ভোটারদের সমর্থন পেতে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন।
পৌর শহরের নয়টি ওয়ার্ডেই মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর উঠান বৈঠকে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিটি বৈঠকের সামনের সারিতে দেখা যায় ১০০-১৫০ জন নারীর উপস্থিতি। এঁরা সবাই ভোটার। কোনো দলের পক্ষে না, তাঁরা উপস্থিত থাকছেন সব প্রার্থীর উঠান বৈঠকেই। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারাভিয়ানেও তাঁদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো।
কলাপাড়া পৌর শহরে এখনো নারীদের উত্ত্যক্ত করার ঘটনা ঘটে। স্কুলের সামনে বখাটেদের উৎপাতে ছাত্রীদের এমনকি অভিভাবকদেরও একাধিকবার হেনস্তা হতে হয়েছে। শহরে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ হলেও নারীদের জন্য কোনো টয়লেট নির্মাণ করা হয়নি। বাসস্ট্যান্ডে নারীদের জন্য নেই যাত্রীছাউনি। শহরের প্রাণকেন্দ্রে ফুটপাত তৈরি করা না হওয়ায় যেকোনো প্রয়োজনে নারীরা বাজারে প্রয়োজনীয় কাজে বের হলে প্রচণ্ড ভিড়ে তাঁদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। কোনো পারিবারিক সমস্যায় নির্বাচিত নারী কাউন্সিলরদের তাঁরা কাছে পান না। তাই এই সমস্যা উত্তরণে এবার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কী প্রতিশ্রুতি দেন তা জানতেই নারীরা এবার নির্বাচনে সরব হয়েছেন বলে জানালেন উঠান বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নারী ভোটার।
পৌর শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আলো রানী বলেন, ‘তিনবার ভোট দিয়েছি। কিন্তু আমাদের জন্য নির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলরা কিছুই করেননি। নির্বাচিত নারী কাউন্সিলরা ভোটের আগে শতবার বাসায় এলেও নির্বাচিত হওয়ার পর আর তাঁদের মুখই দেখিনি।’
ভোটাররা বলেন, পৌর শহরে মহিলা মার্কেট নির্মাণ হলেও সেখানের ব্যবসায়ীরা সব পুরুষ। প্রভাবশালীরা দোকান বরাদ্দ নিয়ে তা ভাড়ায় দিয়ে চালাচ্ছেন। পৌরসভায় নির্বাচিত মেয়র প্রার্থীরা এই মহিলা মার্কেট থেকে পুরুষ উচ্ছেদ করবেন কি না তার প্রতিশ্রুতি চান। একাধিক নারী ভোটার বলেন, নির্বাচিত মেয়র-কাউন্সিলররা শহরের উন্নয়ন করবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নারী উন্নয়নে তাঁরা কী পদক্ষেপ দেবেন তা জানতেই উঠান বৈঠকে আসছেন।
১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে গত নির্বাচনে বিজয়ী সংরক্ষিত কাউন্সিলর লাইজু হেলেন লাকী এবার কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছেন। তিনি বলেন, নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের কী কাজ গত পাঁচ বছরেও তা জানতে পারেননি। গত নির্বাচনের আগে ঘরে ঘরে গিয়ে নারীদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কিন্তু তাদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। নারীদের নিয়ে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ছাড়া তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ না থাকায় পৌরসভা থেকে কোনো সহায়তা করতে পারেননি।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, নারীরা এখন অনেক সচেতন। তিনি নির্বাচিত হলে সন্ত্রাসমুক্ত পৌর শহর গঠন করবেন। এতে নারীরা নির্বিঘ্নে ঘরের বাইরে বের হতে পারবেন। তা ছাড়া যাত্রী ছাউনি ও নারীদের জন্য পৃথক টয়লেট নির্মাণ করারও তাঁর পরিকল্পনা রয়েছে।
বিএনপি সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী হুমায়ুন কবির শিকদার বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে বর্তমানে নারীদের যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে চেষ্টা করবেন।
জাপা সমর্থিত মেয়র প্রার্থী হুমায়ুন কবির মাসুম বলেন, তিনি নির্বাচিত হলে শুধু আধুনিক পৌর শহর গঠনে ভূমিকা রাখবেন। আর আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী বিপুল হাওলাদার মহিলাদের সর্বক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবেন বলে আশ্বাস দিচ্ছেন।