৩০ জানুয়ারি খুলছে রাঙামাটি সরকারি কলেজ
তিন মাসের অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে খুলছে পাহাড়ের সবচেয়ে পুরোনো আর ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রাঙামাটি সরকারি কলেজ। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় ৩০ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরুর কথা রয়েছে।
এর আগে ৮ জানুয়ারি রাঙামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ছাত্রলীগ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ ও ছাত্রদল নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন। সে সময় ছাত্রলীগ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের (পিসিপি) নেতারা ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য ও দাবি উপস্থাপন করলে সভাটি কোনো সমঝোতা ছাড়াই শেষ হয়।
বৈঠকে পিসিপি তাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা প্রত্যাহারের শর্ত দেয় কলেজ ছাত্রলীগকে। কলেজ ছাত্রলীগ জানায়, এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগ ও সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে তাদের কথা বলতে হবে এবং এ জন্য সাত দিনের সময় চায় তারা। কিন্তু সাত দিন পেরিয়ে গেলেও দুই ছাত্রসংগঠনের নেতারা এ বিষয়ে সমঝোতায় যেতে পারেননি।
এর পর কলেজ অধ্যক্ষ উভয় সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান। কিন্তু সংগঠন দুটো একসঙ্গে না গিয়ে পৃথকভাবে নিজেদের অবস্থানের কথা জানায় অধ্যক্ষকে।
রাঙামাটি সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মফিজ আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করেছি, জেলা প্রশাসক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তারা তো কারো আহ্বানেই সাড়া দিল না, তাদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানের কারণে তো আর আমরা অনন্তকাল কলেজ বন্ধ রাখতে পারি না। তাদের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা আছে, তাদের কোনো দাবি থাকলে তারা কথা বলতে পারবে। কিন্তু ৩০ জানুয়ারি কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন ও তাদের ভবিষ্যতের বিষয়টিই আমাদের প্রধান বিবেচ্য বিষয়।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৭ অক্টোবর রাঙামাটি সরকারি কলেজে ছাত্রলীগ ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের দুদল কর্মীর মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম স্থগিত করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এর পর গত তিন মাসে একাধিকবার চেষ্টা করেও আর কলেজের শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা যায়নি। এর মধ্যে কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চললেও বন্ধ ছিল শ্রেণি কার্যক্রম।
ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের সমর্থন, পিসিপির ভিন্ন মত
রাঙামাটি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আহম্মেদ ইমতিয়াজ রিয়াদ বলেন, ‘কলেজ খোলার সিদ্ধান্তকে কলেজ ছাত্রলীগ স্বাগত জানায়। আমরা আগে থেকেই সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থে কলেজ খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আসছিলাম। দীর্ঘদিন পর হলেও কলেজ খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসন ও কলেজ কর্তৃপক্ষকে আমরা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানাই। আশা করছি, এখন থেকে নিয়মিতভাবেই শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালিত হবে।’
কলেজ ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক অলি আহাদ বলেন, ‘কলেজ খুলে দেওয়ার মাধ্যমে কলেজে আবারো স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম চালুর সিদ্ধান্তকে আমরা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। আমরা মনে করি, এর মাধ্যমে রাঙামাটি সরকারি কলেজ আবারো প্রাণ ফিরে পাবে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র বহন করার সিদ্ধান্তটিও সঠিক বলে আমরা মনে করি। কলেজে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী উপকৃত হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা-ও কমে আসবে। আমরা চাই নিরাপদ ও স্বাভাবিক ক্যাম্পাস।’
তবে কলেজ খোলার সিদ্ধান্তকে ছাত্রলীগ ও ছাত্রদল সমর্থন করলেও ভিন্নমত পোষণ করেছেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতারা। পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নেতা সৌমিত্র চাকমা বলেন, ‘কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত তো শিক্ষার্থীদের জন্য খুব ভালো সিদ্ধান্ত। তবে মামলা প্রত্যাহার না করে কলেজ খোলার সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি। কারণ, মামলার কারণে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাস করতে পারবে না। আমাদের নেতাকর্মীদের অনেকেই মামলার আসামি। আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষসহ সবার প্রতি আহ্বান জানাব, কলেজের সুষ্ঠু শিক্ষা কার্যক্রমের স্বার্থে যেন আমাদের নেতাকর্মীদের নামে দায়ের করা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।’
তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাঙামাটি সরকারি কলেজে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে ছাত্রলীগ ও পিসিপি কর্মীরা। এতে দুপক্ষেই বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলায় বেশ কিছু পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।