ঝিনাইদহে বিজিবির গুলিতে দোকানি নিহত
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/01/30/photo-1454175511.jpg)
ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী মাটিলা গ্রামে বিজিবির গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন আরো চারজন। ভারত থেকে গরু আনা নিয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বিজিবি ও গ্রামবাসীর মধ্যে ‘সংঘর্ষের’ সময় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তি হলেন মাটিলা গ্রামের আবদুল মালেক চৌধুরীর ছেলে চায়ের দোকানি রফিকুল ইসলাম (২৮)। আহত ব্যক্তিরা হলেন একই গ্রামের মৃত আবদুল খালেকের ছেলে ফিরোজ (৪০), মৃত আজিবরের ছেলে বাবলু (২৮), আজিজুরের ছেলে আতিকুর (৩০) ও তাঁর স্ত্রী। আহতদের যশোর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এদের মধ্যে আতিকুর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ফিরোজ ও বাবলুর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকেরা তাঁকে ঢাকায় নিতে বলেছেন।
যশোরে বিজিবির ২৬ ব্যাটালিয়নের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন গুলিতে একজনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন। তাঁর সঙ্গে মহেশপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশাফুর রহমানসহ পদস্থ কর্মকর্তারা বৈঠক করছেন। আতঙ্কিত গ্রামের লোকজন জোটবদ্ধ হয়ে নিহতের লাশের কাছ থেকে সামান্য দূরে অবস্থান করছেন।
বিজিবির পরিচালক জানান, সন্ধ্যায় একদল গরু পাচারকারী ভারত থেকে সীমান্ত পার হয়ে গরুসহ দেশের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এ সময় মহেশপুরের জুলুলী বিওপির বিজিবির টহল দল তাদের ধাওয়া করে। একপর্যায়ে গ্রামবাসী বিজিবিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার জন্য বিজিবি পাঁচ-ছয়টি গুলি চালালে ঘটনাস্থলে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
তবে তাঁর নাম বলতে পারেননি লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন। আহতদের বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বলে জানান তিনি।
বিজিবি সূত্র জানায়, বিজিবি পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন ভারতের রানাঘাটে বিএসএফের সঙ্গে প্রীতি ভলিবল খেলায় বিজয়ী হয়ে ফেরার সময় গুলির খবর পান এবং দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তিনি জুলুলী বিজিবি ক্যাম্পে কর্মরত বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। খবর পেয়ে ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ সেখানে উপস্থিত হন। তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানেন। এর আগেই মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও ইউএনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে বিজিবি ক্যাম্পে উপস্থিত হন ।
মহেশপুর থানার ওসি শাহিদুল ইসলাম শাহিন রাত ৮টার দিকে এনটিভি অনলাইনকে জানিয়েছেন, বিজিবির গুলিতে গ্রামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন। এর বেশি কিছু জানাননি তিনি।
অপর দিকে ঘটনাস্থল থেকে মাটিলা বাজারের দোকানি আশরাফুল জানান, সন্ধ্যায় এক ব্যক্তি ভারত থেকে একটি বাছুর গরু নিয়ে সীমান্ত পার হয়ে গ্রামে ঢুকে পড়ে। জুলুলী ক্যাম্পের সুবেদার শিশির কুমারের নেতৃত্বে পাঁচ-ছয়জন বিজিবি সদস্য তাঁকে ধাওয়া করে আটক করতে ব্যর্থ হয়। এ সময় মাটিলা বাজারের দোকানে বসে থাকা গ্রামবাসীর কাছে বিজিবির সদস্যরা কে গরু এনেছে মর্মে জানতে চান। বাজারের উপস্থিত গ্রামের লোকজন বিষয়টি জানাতে অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে বিজিবি সদস্যরা তাঁদের লাঠিপেটা শুরু করেন। এ খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে শত শত লোক বাজারে ছুটে আসেন। তাঁরা বিজিবি সদস্যদের সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক করার একপর্যায়ে মারমুখী হয়ে ওঠেন। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বিজিবি গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন রফিকুল। গুলিবিদ্ধ হন আরো চারজন। এঁদের মধ্যে একজন গৃহবধূ রয়েছেন। তিনি আহত আতিকুরের স্ত্রী। তাঁদের মধ্যে ফিরোজের বুকে ও বাবলুর হাতের তালুতে গুলি লেগেছে। আতিকুরের স্ত্রীর কানে গুলি লেগেছে বলে জানান তিনি।
ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক মো. মাহবুর আলম তালুকদার বলেছেন, ঘটনাস্থলে মহেশপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। বিস্তারিত রিপোর্ট পাননি তিনি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত নিহত রফিকুলের লাশ বিজিবি ক্যাম্পের কাছে পড়ে আছে। লাশের কাছ থেকে সামান্য দূরে গ্রামের শত শত লোক অবস্থান করছেন। এলাকায় বিজিবির শক্তি বাড়ানো হয়েছে।
বিশেষ একটি সূত্র জানায়, সীমান্তের কাছাকাছি হাটবাজারে রাত ৮টার পর পর চলাচলের ওপর বিজিবির কঠোরতার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে বেশ কিছু দিন থেকে ক্ষোভ বিরাজ করছে। আজ বিজিবি সদস্যরা লাঠিপেটা শুরু করলে গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।