ছিটমহল থাকায় ৪০ বছর পর মুক্তিযোদ্ধার লাশ উত্তোলন
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/03/05/photo-1457183305.jpg)
ছিটমহল থাকার কারণে কোনো দেশেরই আইন ও বিচারিক সুবিধা পেতেন না। ছিটমহল এখন ইতিহাস। ৪০ বছর আগের একজন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়। ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর গত ডিসেম্বরে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার সূত্র ধরে আজ শনিবার কবর থেকে তোলা হলো লাশ।
পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের সদ্য বিলুপ্ত শালবাড়ী এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ১৯৭৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে আহত করে আজিমুল হককে। পরদিন মারা যান আজিমুল হক।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই ছিটমহল বিলুপ্ত হওয়ার পর আজিমুল হকের স্বজনরা বাংলাদেশের নাগরিক হন। গত বছরই ২৯ ডিসেম্বর পঞ্চগড় মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতে ১৩ জনকে আসামি করে আজিমুল হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের ছোট ভাই আরিফুল ইসলাম।
আরিফুল ইসলাম জানান, আজিমুল হক একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দুর্বৃত্তরা আজিমুলকে পেটানোর পর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে দেয়নি। চিকিৎসা না পেয়ে ঘটনার পরদিন তিনি মারা যান। জমি নিয়ে বিরোধের কারণে আজিমুল নিহত হন বলে তিনি জানান।
আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল ছিল ছিটমহল। এ কারণে আমরা মামলা করতে পারিনি। বাংলাদেশে এ এলাকায় চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে আদালতে মামলা করি আমি। আমার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
যাঁরা আজিমুলের জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে সরফরাজ হোসেন, ইউসুফ আলী ও আজিজার রহমান লাশ উত্তোলনের সময় উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা জানান, চাচাতো ভাইদের মধ্যে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল। ঘটনার দিন আজিমুলের ওপর আসামিরা দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে। প্রথমে তীর দিয়ে তাঁকে আঘাত করা হয়, পরে কুপিয়ে জখম করা হয়।
লাশ উত্তোলনের খবরটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে শত শত নারী-পুরুষ সেখানে ভিড় জমায়। ৪০ বছর পর লাশ উত্তোলনের বিষয়টিতে উপস্থিত সবার চোখেই কৌতূহল লক্ষ করা যায়।
গত ২৯ ডিসেম্বর আরিফুলের দায়ের করা মামলাটি গ্রহণ করার জন্য বোদা থানাকে নির্দেশ দেন পঞ্চগড় মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতের বিচারক কৃষ্ণ কান্ত রায়। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি বোদা থানা মামলাটি রুজু করেন।
বোদা থানার পুলিশ আজিমুল হত্যার বিষয়টি তদন্ত করে মামলাটির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়।
এরপর মামলার অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আদালত ওই মুক্তিযোদ্ধার লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন।
আদালতের নির্দেশে বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়ালের উপস্থিতিতে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এস আই এম রাজিউল করিম রাজু, বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বোদা থানার উপপরিদর্শক দীন মোহাম্মদ আবদুল করিমের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের কবর খননকারী একটি দল আজিমুলের লাশের দেহাবশেষ ও মাটিসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দীন মোহাম্মদ জানান, মুক্তিযোদ্ধা আজিমুল হক হত্যা মামলায় বিলুপ্ত শালবাড়ী ছিটমহলের আবদুর রহমান, খলিলুর রহমান, রফিকুল ইসলাম, জসিয়ার রহমান, নজরুল ইসলাম, তছিরউদ্দিন, সিদ্দিক, নাজমুল হক, মজিমউদ্দিন, জয়নাল আবেদীন, ইউনুস শেখ, বাবুল ও দিপুকে আসামি করা হয়েছে। এসব আসামির মধ্যে আবদুর রহমান, নজরুল, তছিরউদ্দিনসহ চারজন মারা গেছেন। নয়জন আসামি জীবিত রয়েছেন। তবে বর্তমানে তাঁরা পলাতক। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি মামলাটি বোদা থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। আদালতে নির্দেশে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য উত্তোলন করে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হবে।’
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা এস আই এম রাজিউল করিম রাজু জানান, লাশের দেহাবশেষ, মাটিসহ বিভিন্ন আলামত ময়নাতদন্ত শেষে আলামত ঢাকা রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে।
বোদা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু আউয়াল বলেন, ‘৬৮ বছরের বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পেয়ে ওই এলাকার মানুষ হত্যাকাণ্ডের ৪০ বছর পরও বিচার পাচ্ছে। আদালতের নির্দেশে আজ শনিবার মুক্তিযোদ্ধা আজিমুলের লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে। এই বিচারকার্যের মধ্য দিয়ে সাবেক ছিটমহলবাসীরা আইন ও বিচারিক সুবিধাপ্রাপ্তির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’