অন্তত ৫০ ইউপির নির্বাচন বাতিল চায় বিএনপি
ভাঙচুর, হামলা, সহিংসতা, গোলাগুলি, কেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাইসহ বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া হয়েছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এর অন্তত ৫০টির নির্বাচন বাতিলের অনুরোধ করেছে বিএনপি।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে এই অনুরোধ জানায়।
বৈঠক শেষে বের হয়ে আবদুল্লাহ আল নোমান সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের দিন সব কর্তৃত্ব থাকে নির্বাচন কমিশনের। পুলিশ বা অন্যান্য অথরিটি তাদের অধীনেই থাকে। এবারই আমরা এটার ব্যতিক্রম দেখলাম। বিভিন্ন এলাকায় এলাকায় সরকারি বাহিনী, সরকারি দল পুলিশ তাদের সহযোগিতা করেছে এবং সেই সহযোগিতার মধ্য দিয়ে অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেখানে যা শক্তি সেই শক্তি নিয়ে নির্বাচন করে তারা ফলাফলের জন্য হয়তো অপেক্ষা করছে।’
নোমান বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশনকে একটা অনুরোধ করেছি, সেটা হচ্ছে ৭১৩টি ইউনিয়নের অধিকাংশেই কারচুপি হয়েছে। এর মধ্যে অনেকগুলো ইউনিয়ন আছে যার সব কেন্দ্রেই এককভাবে শক্তিধর ও সরকারি দলের আনুকুল্যে তারা হয়তো চেয়ারম্যান ডিক্লেয়ারেশন পেতে পারে। আমাদের অনুরোধ ছিল, অন্তত নির্বাচন কমিশন একটা উদাহরণ সৃষ্টি করুক। সেটা হলো, ৫০টি হলেও ইউনিয়নের নির্বাচন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন প্রমাণ করুক যে আমরা আসলেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। যারা সন্ত্রাস করে নির্বাচনকে নিজের কাছে নিতে চেয়েছে, ফলাফল নিজের কাছে চেয়েছে তাদের আমরা নিতে দেই নাই। এটা যদি তারা একবার বলতে পারেন, এই নির্বাচনগুলো বাতিল করে দিতে পারেন তাহলে কমিশনের ওপরে জনগণের যে আস্থা, আমাদেরও যে বিশ্বাস তা ফিরে আসবে।’
এসব কথাই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে আলোচনা করেছেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
আবদুল্লাহ আল নোমান আরো বলেন, নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশসহ অন্য বাহিনীর ওপরে থাকেন প্রিজাইডি এবং রিটার্নিং অফিসার। কোথাও যদি কোনো সংঘর্ষ হয়, ভোট যদি সবাই দিয়েও দেয় তবু এ ভোট বাতিল করার ক্ষমতা তাদের থাকে।
আজকের নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন উল্লেখ করে নোমান বলেন, এতে যেসব কর্মকর্তা নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কাজ করেছেন তারা যথাযথ ভূমিকা পালন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হতো।
আবদুল্লাহ আল নোমানের সঙ্গে প্রতিনিধি দলে ছিলেন - বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন সুজা উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল হক চৌধুরী, যুগ্মসম্পাদক শাজাহান মিয়া এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য কলিম উদ্দিন আহমেদ মিলন।
আজ সকাল ৮টায় ৩৪ জেলায় একযোগে ভোটগ্রহণ শুরু হয়ে বিকাল ৪টায় শেষ হয়। এবারই সারা দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নানা সহিংসতা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, গুলি বর্ষণ, মারপিট, হামলা ও কেন্দ্র দখলের খবর পাওয়া গেছে।
নির্বাচনের আগের দিনই এসব সহিংসতার আশঙ্কা করেছিল নির্বাচন কমিশন। গতকাল সোমবার ভোটপূর্ব সর্বশেষ সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনী সহিংতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ। তিনি খোলাখুলিই বলেন, ‘নির্বাচনী সহিংসতা আমরা কমিয়ে আনতে পারছি না। কারণ অন্যান্য ডিপার্টমেন্টের কাছ থেকে কাঙ্ক্ষিত সহযোগিতা পাচ্ছি না।’
সিইসি আরো বলেন, ‘কোনো কেন্দ্রে ভোট কারচুপি ও সহিংসতা হলে ওই কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়ী হবেন।’