মহেশপুরে মাঠ গরম, আ. লীগ বিদ্রোহী প্রার্থীর কার্যালয় ভাঙচুর
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2016/03/29/photo-1459269594.jpg)
ঝিনাইদহের সীমান্তকন্যা মহেশপুর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে এখন ভোটের হাওয়া তুঙ্গে। দ্বিতীয় ধাপে আগামী ৩১ মার্চ এখানে ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
ভোটের মাত্র কয়েকদিন আগে গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে পরিস্থিতি আরো গরম হয়ে উঠেছে। উপজেলা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের ভোলাডাঙ্গা বাজারে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবদুল মালেকের নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা।
মহেশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আমিনুল ইসলাম বিপ্লব জানান, গতকাল সেখানে নৌকা প্রতীকের পক্ষে একটি নির্বাচনী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় জেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। সভা শেষ করে জেলা নেতারা চলে যাওয়ার পরই এ ঘটনা ঘটে ।
ওসি আরো জানান, খবর পাওয়া মাত্র পুলিশ, বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। রাত ১২টার দিকে সব ধরনের প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে। ৩১ মার্চ ১২টি ইউনিয়নের ভোট গ্রহণ করা হবে।
ভারত সীমান্ত সংলগ্ন হওয়ায় এ উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন গুরুত্ব সহকারে আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি বিবেচনা করছে স্থানীয় প্রশাসন। জেলা পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থার করা তালিকা মোতাবেক ১১৩টি ভোটকেন্দ্রের ৫৭টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৫৬টি কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, ভোটের দিন দুই হাজার ৮৩০ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রাখা হবে। এর মধ্যে ৯৭ জন বিজিবি সদস্য ও র্যাব। এ ছাড়া তিনটি ইউনিয়নের জন্য থাকছে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে চারজন সশস্ত্র পুলিশ ও চারজন সশস্ত্র আনসার মোতায়েন করা হবে।
এ উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন ৫০ জন। সাধারণ সদস্য পদে ৩৯৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০০ জন ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। এখানে মোট ভোটার রয়েছেন দুই লাখ ২০ হাজার ৫৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ১১ হাজার ১২২ জন এবং নারী ভোটার এক লাখ ৯ হাজার ৪৩৯ জন।
প্রার্থীরা শেষ সময়ে ভোটাদের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছেন। তারা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। মাঠ গরম করে রেখেছেন সদস্য পদপ্রার্থীরাও। তারা পাড়া মহল্লায় মা-বোনদের হাত-পায়ে ধরে প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিচ্ছেন।
এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যানদের মধ্যে সরাসরি জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচজন, বিএনপির চারজন এবং আওয়ামী লীগের তিনজন। বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান জামায়াতে ইসলামীর।
নির্বাচনের ভোটের সময় যতই এগিয়ে আসছে দৃশ্যপট ততই পাল্টে যাচ্ছে। হামলা মামলা ক্রসফায়ারের ভয়ে তটস্থ বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে কোণঠাসা হয়েছে পড়েছে জামায়াত। বিএনপিতে নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব চরমে। আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান চঞ্চলের মধ্যকার বিরোধ চোখে পড়ার মতো।
টালমাটাল অবস্থায় এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী রয়েছেন চারজন এবং বিএনপিতে পাঁচজন। এ উপজেলায় জামায়াত নির্বাচনের দিন তাণ্ডব সৃষ্টি করতে পারে এমন আশঙ্কার কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী।
শেষ মুহূর্তে জমজমাট নির্বাচনী যুদ্ধ চলছে বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নে। ইউনিয়নটিতে ছয়জন চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন। বিএনপির একক প্রার্থী। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। রয়েছেন একজন জামায়াত নেতা, যিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেছেন।
এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থীরা হলেন জুলফিকার আলী (স্বতন্ত্র-জামায়াত), আব্দুল মালেক আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী, আব্দুল লতিফ (বিএনপি) এবং মাসুদুর রহমান (আওয়ামী লীগ)।
মাসুদুর রহমান দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করেছেন। তাঁর দাবি, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
পাল্টা অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী আব্দুল মালেক। তাঁর অভিযোগ, নৌকার লোকজন তাঁর কর্মীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে। সোমবার রাতে তাঁর বেশ কয়েকটি নির্বাচনী ক্যাম্প ভাঙচুর করেছে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা।
কাজীর বেড় ইউনিয়নের আওয়ামী লীগদলীয় চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী সেলিম রেজা নতুন কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাঁর ভাষায়, জামায়াত নির্বাচনের দিনে ৫ জানুয়ারির মতো করে ভোটকেন্দ্রে তাণ্ডব চালাতে পারে।
জামায়াতের হয়ে ইউনিয়নে স্বতন্ত্রভাবে লড়ছেন আবদুল আলী। বিএনপিদলীয় প্রার্থী তরফদার তৌফিক অবশ্য কোনো মন্তব্য না করে শান্তিপূর্ণ ভোট হলে বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে লড়ছেন তিনজন।
নেপা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াত নেতার মধ্যে লড়াই জমে উঠেছে। এ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদের জন্য ভোটযুদ্ধে নেমেছেন তিনজন। এদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী নিজাম উদ্দিন প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিরুদ্ধে পোস্টার ছিড়ে ফেলা, কর্মীদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন।
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সামছুল আলম মৃধা তা নাকচ করে দেন। বিএনপির মহিউদ্দিন দুর্বল অবস্থানে থেকেও বিজয় অর্জনের জন্য কাজ করছেন।
এসবিকে ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত সাজ্জাতুল ইসলাম বর্তমান চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. আরিফান হাসান চৌধুরী। বিএনপির একক প্রার্থী মো. আক্তারুল ইসলাম। চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবুও লড়াই হবে আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপির মধ্যে।
মজার খবর হলো, মান্দারবাড়িয়া ইউনিয়নে আপন দুই ভাই চেয়ারম্যান পদে লড়াই করছেন। এঁরা হলেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম হোসেন জগলুল পাশা ও তাঁর ছোট ভাই একই ইউনিয়নের যুবদলের সভাপতি এস এম হোসেন জাফরিন পাশা।
এ দুজনের সঙ্গে আরো লড়ছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মো. শফিদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের মো. আমিনুর রহমান, জামায়াত নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মান্নান ও জাতীয় পার্টির সেলিম রেজা। পরস্পরবিরোধী অভিযোগের মধ্য দিয়ে এ ইউনিয়নে প্রচার জমে উঠেছে।
এ ছাড়া নাটিমা ইউনয়নে চারজন, আজমপুরে পাঁচজন, যাদবপুরে চারজন, শ্যামবুড়ে পাঁচজন, স্বরূপুরে তিনজন, পান্থাপাড়ায় তিনজন এবং ফতেুপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে চারজন লড়াই করছেন।