স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে ধরার পর যত কাণ্ড
পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতাকে মুক্ত করতে তাঁর সমর্থকরা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ আরো পাঁচজনকে আটক করে। পরে আওয়ামী লীগের নেতাদের চাপের মুখে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতাসহ চারজনকে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল বুধবার বিকেলে কলাপাড়ার নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে চৌমাথা এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে কলাপাড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বাদল একজন কনস্টেবল নিয়ে মোটরসাইকেলে করে চৌমাথা পৌঁছান। সেখান থেকে সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত ফুটবল খেলার আয়োজক, বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কলাপাড়া পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তারেক বয়াতিকে আটক করে। মোটরসাইকেলে ওঠানোর সময় তারেক ও তাঁর লোকজন কনস্টেবলের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন এবং মোটরসাইকেলের টায়ার কেটে হাওয়া ছেড়ে দেন। পরে আরো পুলিশ সদস্য গিয়ে তারেককে ধরে থানায় নিয়ে যায়।
কলাপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে জানান, বুধবার সন্ধ্যার দিকে তারেককে ছিনিয়ে নিতে সাত-আট যুবক থানায় ঢুকে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় পুলিশ আরো পাঁচজনকে আটক করে। ওই সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুর রহমান স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুবুর রহমান তালুকদারের প্রটোকলে কুয়াকাটায় অবস্থান করায় তারেককে থানাহাজতে না ঢুকিয়ে পরিদর্শকের কক্ষে বসানো হয়।
এদিকে, তারেকের মা বিমাকর্মী হাসিনা বেগম বাসশ্রমিকসহ আওয়ামী লীগ সমর্থিত দুই শতাধিক লোক নিয়ে থানা ঘেরাও করে পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে থানা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। পুলিশ লাঠিপেটা করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিমুল হককে তাৎক্ষণিক কলাপাড়া থানায় পাঠান। এদিকে তারেকের আটকের খবর শুনে সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান তালুকদার কুয়াকাটা থেকে ওসিকে নিয়ে রাত ৮টার দিকে কলাপাড়া থানায় পৌঁছান। মাহবুবুর রহমান গাড়ি নিয়ে থানার মূল ফটকে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় থানায় উপস্থিত হন কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র রাকিবুল হাসান, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোতালেব তালুকদারসহ দলীয় অনেক নেতা-কর্মী। ঘণ্টাব্যাপী সমঝোতার পর তারেক বয়াতিসহ চারজনকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিতে সমর্থ হন তাঁরা।
এ ব্যাপারে কলাপাড়া থানার ওসি আজিজুর রহমান জানান, মাইনুদ্দিন ও শাহিন নামের দুজনকে খেলায় গোলমাল করার অভিযোগে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তারেকসহ অন্যরা নির্দোষ বিধায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য থানায় আসেননি।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি আরো বলেন, কোনো চাপে নয়, তারেকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না থাকায় আটক রাখা যায়নি। থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার সময় তিনি থানায় ছিলেন না বলে জানান।
সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত পটুয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিমুল হক বিষয়টিকে নানাভাবে এড়িয়ে গেলেও ক্ষমতাসীন দলের নেতারা আটক চারজনকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশকে বাধ্য করেছেন বলে কৌশলে স্বীকার করেন।
সংসদ সদস্য মাহবুবুর রহমান ও মেয়র রাকিবুলের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে কলাপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা তারেক বয়াতিকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তবে তিনি স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, পুলিশ তাঁকে আটক করেনি। খেলায় গোলমাল করার অভিযোগে পুলিশ দলীয় এক কর্মীকে আটক করলে তাঁকে ছাড়াতে তিনি লোকজন নিয়ে থানায় গিয়েছিলেন। তখন পুলিশ তাঁকে আটক করে। পরে আবার ছেড়েও দেয়।