আওয়ামী লীগ নেতা ও গাজীপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে।

হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে আজ বুধবার রায়টি প্রকাশ হলো।

১৮২ পৃষ্ঠার এ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়েছে।

আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শেষে চলতি বছরের ১৫ জুন এ মামলার রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। আজ সেই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি প্রকাশিত হলো।

বার্তা সংস্থা বাসস জানিয়েছে, রায়ে ছয় ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়। তাঁরা হলেন—বিএনপি নেতা নূরুল ইসলাম সরকার, নূরুল ইসলাম দিপু, মাহবুবুর রহমান মাহবুব, শহীদুল ইসলাম শিপু, হাফিজ ওরফে কানা হাফিজ ও সোহাগ ওরফে সরু।

২০০৪ সালের ৭ মে গাজীপুরের টঙ্গীর নোয়াগাঁও এম এ মজিদ মিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় সংসদ সদস্য আহসানউল্লাহ মাস্টারকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার পরদিন তাঁর ভাই মতিউর রহমান ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে দ্রুত বিচার আইনে টঙ্গী থানায় মামলা করেন। এ মামলায় ২০০৪ সালের ১০ জুলাই অভিযোগপত্র দায়ের করে পুলিশ।

মামলায় প্রধান আসামি করা হয় জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের ছেলে নামে পরিচিত জাতীয় ছাত্রসমাজের তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম দীপুকে। এ ছাড়া এজাহারে যুবদলের সাবেক কেন্দ্রীয় শিল্পবিষয়ক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকারকে হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খালেকুজ্জামান প্রায় দুই মাস তদন্ত শেষে ৩০ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। আসামিদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও জাতীয় পার্টির সহযোগী সংগঠন জাতীয় ছাত্রসমাজের নেতাকর্মী। আর পাঁচ আসামি বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী।

এ মামলায় ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক শাহেদ নুরুদ্দীন ২০০৫ সালের ১৬ এপ্রিল আহসানউল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বিচারক প্রধান আসামি নূরুল ইসলাম দীপু ও যুবদল নেতা নূরুল ইসলাম সরকারসহ ২২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন। ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও দুজনকে খালাস দেওয়া হয়।

ওই বছরই আসামিরা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করেন। ২০০৯ সালের নভেম্বরে আপিলের শুনানি শুরু হয়। তিন দিন শুনানির পর আপিলটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়। পরে বিচারপতি আবু তারিক ও বিচারপতি মো. আবদুল হাইয়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানি চলাকালে ২০১০ সালের ৭ জুলাই আপিলটি তৎকালীন প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়। এভাবে পার হয়ে যায় প্রায় সাত বছর।

অবশেষে গত ১৪ জানুয়ারি থেকে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের বেঞ্চে এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হয় এবং ১৫ জুন রায় ঘোষণা করেন আদালত।

গাজীপুর-২ (গাজীপুর সদর-টঙ্গী) আসনে ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আহসানউল্লাহ মাস্টার। এর আগে ১৯৯০ সালে গাজীপুর সদর উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ১৯৮৩ ও ১৯৮৭ সালে দুই দফা পুবাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আহসানউল্লাহ মাস্টার ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের কার্যকরী সভাপতি। এ ছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।