আজ খুশির ঈদ

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসব আমেজে আজ মঙ্গলবার সারা দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ঈদের নামাজ আদায় ও পশু কোরবানির মধ্য দিয়ে পালন করবে ধর্মীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম এ উৎসব।
হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর আত্মত্যাগ ও অনুপম আদর্শের প্রতীকী নিদর্শন হিসেবে প্রায় সাড়ে চার হাজার বছর আগে থেকে শুরু হয় কোরবানির এ প্রচলন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণপ্রিয় পুত্র হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। ওই অনন্য ঘটনার স্মরণেই ঈদুল আজহায় পশু কোরবানির এ রেওয়াজ চালু হয়।
মহান আল্লাহপাকের প্রতি আনুগত্য এবং তাঁরই রাহে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের এ ঐতিহাসিক ঘটনার ধারাবাহিকতায় মুসলিম বিশ্বে কোরবানি ও ঈদুল আজহা উদযাপিত হয়ে আসছে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় দ্বিতীয় বৃহত্তম এ উৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।
ঈদের দিন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বলে বার্তা সংস্থা বাসসের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
ধর্মীয় এ উৎসব উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারাও দেশবাসীকে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
এ উপলক্ষে গত রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত চারদিনের সরকারি ছুটি চলছে। তা ছাড়া শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় দেশবাসী টানা ছয়দিনের ছুটি ভোগ করছে।
লম্বা এ ছুটির কারণে নগরীর লাখ লাখ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে আপনজন ও আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে এরই মধ্যে রাজধানী ছেড়ে গেছেন।
পবিত্র এ দিনটিকে উৎসবের আমেজ দিতে রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলোতে জাতীয় ও ঈদ মোবারকখচিত পতাকা দিয়ে সুশোভিত করা হয়েছে। পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারকখচিত পতাকা উত্তোলন এবং নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ভবনগুলো আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়েছে।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, শিশুসদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র, সেফ হোমস, দুঃস্থ কল্যাণকেন্দ্র এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
হজরত ইব্রাহিম (আ.) নিজ পুত্রকে কোরবানি দেওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর আল্লাহপাকের নির্দেশে তিনি জীবদ্দশায় প্রতিবছরই পশু কোরবানির মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তার আনুগত্যের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেন।
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)ও এ আদর্শ অনুসরণ ও বহাল রাখতে আদিষ্ট হন। তিনিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রতিবছরই কোরবানি করেছেন এবং তাঁর উম্মতদের জন্য এ আদর্শ ও প্রথা অনুসরণের নির্দেশ দিয়ে গেছেন।
এ আদর্শ অনুসরণের লক্ষ্যে গোটা মুসলিম জাহানের পাশাপাশি বাংলাদেশেও ঈদ উদযাপনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে পশু কোরবানি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।
পবিত্র এ উৎসব উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিনোদনমূলক বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচারের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
যথাযোগ্য মর্যাদা ও আনন্দ উৎসবের মধ্যদিয়ে ঈদ উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় রেখে স্থানীয় পর্যায়ে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলো দেশব্যাপী ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। তা ছাড়া বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে সরকারি কর্মসূচির আলোকে ঈদুল আজহা উদযাপনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে চার শতাধিক ঈদ জামাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় জাতীয় ঈদগাহের প্রধান জামাতসহ ঈদুল আজহার ২২৯টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশনে ১৮০টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।
জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এ ব্যাপারে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। এদিকে, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উদ্যোগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সকাল ৮টায় ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে পাঁচটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়, দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় এবং পঞ্চম ও শেষ জামাত সকাল বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে।
দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেন ও বাস চলাচল করবে।
এদিকে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত স্থানগুলোতে পশু কোরবানির জন্য নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই সঙ্গে উভয় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে কোরবানির পশুর বর্জ্য দ্রুত অপসারণের বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশনের ১০ হাজার ৫৪৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বর্জ্য অপসারণে নিয়োজিত থাকবে। ঈদের দিন দুপুর ২টার পর থেকে পরের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সব বর্জ্য অপসারিত হবে বলে ঢাকার দুই মেয়র সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) কোরবানির বর্জ্য অপসারণে দুই লাখ ১০ হাজার চটের বস্তা ও পচনশীল পলিব্যাগ বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নগরীর বর্জ্য অপসারণে পর্যাপ্ত জনবল, যন্ত্রপাতি, মালামাল, পানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নগরবাসীকে দ্রুত পরিচ্ছন্ন নগরী উপহার দিতে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির ৫৭টি ওয়ার্ডে সাত হাজার ৩০৪ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে থাকবেন। তাঁরা ডিএসসিসির ১৪টি অস্থায়ী পশুর হাটের বর্জ্য অপসারণেও কাজ করবেন।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য তিন হাজার ২৩০ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী মাঠে থাকবেন। ঈদে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের জন্য ডিএনসিসিতে দুটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। কোরবানি দেওয়ার জন্য ডিএনসিসি ৬৪৮টি স্থান নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ১৯৬টি স্থানে মাওলানা ও কসাইসহ যাবতীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। পশু জবাইয়ের পর ফিনাইল ও স্যাভলন মিশ্রিত পানি দিয়ে প্রতিটি স্থান দ্রুত পরিষ্কার করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। দ্রুত পশুর বর্জ্য অপসারণের সুবিধার্থে উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুই লাখ পলিব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া এলাকায় এলাকায় মাইকে প্রচার ও সাড়ে পাঁচ লাখ লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।