শিক্ষক রেজাউল হত্যার ছয় মাসেও অভিযোগপত্র নেই

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস চলে গেছে। কিন্তু এখনো এ মামলার অভিযোগপত্র (চার্জশিট) জমা দিতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও রেজাউলের পরিবার।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের পরিদর্শক রেজাউস সাদিক বলেন, তদন্ত কার্যক্রম আমাদের অনেক দূর এগিয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী মাসের মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিতে পারব।
নিহত অধ্যাপক রেজাউলের মেয়ে রেজওয়ানা হাসিন শতভি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা শুনেছি সম্ভাব্য মূল আসামি শরীফুল ইসলাম নাকি দেশে নেই, ভারতে পালিয়েছে। তাকে ধরার জন্য আমাদের এখানে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা আমরা এখনো জানি না।’
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রেজাউস সাদিক বলেন, ‘আমরা আশা করছি, শরীফুল ইসলামের বিষয়ে খুব দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এ হত্যাকাণ্ডের ছয় মাস উপলক্ষে আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শোকর্যালি ও সমাবেশ করেছে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা মামলার অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার জোর দাবি জানায়। খুব দ্রুত পুলিশ প্রশাসন তা জমা না দিলে, রাবির ভর্তি পরীক্ষার পর আবারো আন্দোলনে শুরু করা হয় বলেও সমাবেশ থেকে জানানো হয়।
সমাবেশে ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ড. মাসউদ আখতার বলেন, সরকারের যেসব বিভাগ কাজ করছে রেজাউল স্যারের হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে, তারা যে দায়িত্ব পালন করেনি এ কথা বলবে না। তারা বেশ কয়েকজনকে আটক করেছে। তবে এখনো তারা অভিযোগপত্র জমা দেয়নি। ফলে এ মামলার বিচারের কার্যক্রম শুরু করা যাচ্ছে না। ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলে আমরা রাজশাহীর নতুন বিভাগীয় পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দেখা করব।
রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ড. মো. শহীদুল্লাহ বলেন, দ্রুত বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা শান্ত হতে পারি না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এ হত্যার বিচার কার্যক্রম শুরু করার জোর দাবি জানাই।
শিক্ষকের মেয়ে রেজওয়ানা হাসিন শতভি বলেন, তদন্তের যে একেবারে অগ্রগতি হয়নি তা নয়। অনেকে চিহ্নিত হয়েছে, বিভিন্ন সময় ক্রসফায়ারে মারাও গেছে। তবে ছয় মাসেও অভিযোগপত্র জমা না দেওয়ায় আমরা হতাশ হয়ে পড়ছি।
শরীফুল ইসলাম সম্পর্কে শতভি বলেন, ‘শরীফুল আমাদের গ্রামের বাড়ির লোক। শরীফুলের বাবা আবদুল হাকিম আমার বাবার শিক্ষক হওয়ায় দেখা হলেই কথাবার্তা বলতেন। বাবা শরীফুলকে ভালোও বাসতেন। শরীফুলকে বাবা তাঁর ক্লাসে কখনো বকাঝকা বা বের করে দিয়েছে বলে শুনিনি। কিন্তু এই শরীফুলই এমন কাজ করবে ভাবতেও পারিনি।’
শতভি আরো বলেন, ‘অনেকেই জিজ্ঞাসা করে, আমাদের গ্রামের কেউ এর এই হত্যার সঙ্গে জড়িত কি না। এই প্রশ্নের উত্তর আমি নিজেও জানি না। আর শরীফুলকে সম্ভাব্য প্রধান আসামি বলা হলেও শরীফুল কারো নির্দেশে এই হত্যা করেছে কি না, তাও জানা জরুরি।’
গত ২৩ এপ্রিল নগরীর শালবাগান এলাকায় নিজ বাড়ির অদূরে অধ্যাপক রেজাউল করিমকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের ছেলে রিয়াসাত ইমতিয়াজ সৌরভ বাদী হয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।