টুঙ্গিপাড়ায় রোগীর মৃত্যু, হাসপাতালে তাণ্ডব
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/05/22/photo-1432306611.jpg)
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শতাধিক লোক তাণ্ডব চালিয়েছে। তাদের হামলায় চিকিৎসক, সেবিকা, পুলিশসহ অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার বেলা ৩টার দিকে এ হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে আগামীকাল শনিবার থেকে শুধু জরুরি বিভাগ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সব ধরনের চিকিৎসাসেবা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঘটনার খবর পেয়ে পরে জেলা প্রশাসক মো. খলিলুর রহমান ও পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, ‘একটি রিউমার ছড়িয়ে কিছু লোক এ ঘটনা ঘটিয়েছে। তারা সরকারি সম্পদ ভাঙচুর করেছে। একজন চিকিৎসক ও সেবিকাকে ব্যাপক মারধর করেছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গত ১৪ মে উপজেলার মিত্রডাঙ্গা গ্রামের মনা ভারতী (২২) নামের সনাতন ধর্মাবলম্বী এক নারী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে খাদিজাতুল কোবরা নাম ধারণ করেন। তিনি গহরডাঙ্গা গ্রামের আকবর হোসেনের বাড়িতে থাকেন এবং তাঁকে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করেন।
গত ১৯ মে খাদিজা পেটের ব্যথা নিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। আজ শুক্রবার সকালে হাসপাতালের সেবিকা কাকতি লতা পাল তাঁকে ইনজেকশন দেন। তাঁর কিছু পরেই তিনি মারা যান।
সেবিকা কাকতি লতা পাল দাবি করেন, তিনি প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ইনজেকশন প্রয়োগ করেছেন।
তবে হাসপাতালে ভাঙচুরকারী গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসার কয়েকজন অভিযোগ করেন, ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় কাকতি লতা খাদিজাতুল কোবরাকে ভর্ৎসনা করেন। তারপরই সেবিকা ইচ্ছাকৃতভাবে এমন ইনজেকশন দেন যাতে খাদিজাতুল কোবরা মারা যান।
ওই অভিযোগ ছড়িয়ে গওহরডাঙ্গা গ্রাম থেকে হাজারখানেক লোক লাঠিসোটা নিয়ে টুঙ্গিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হামলা চালায়। হামলাকারীরা ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চালিয়ে কমপ্লেক্সের নিচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত জানালা-দরজা, টেবিল-চেয়ার ও অন্যান্য আসবাবপত্র তছনছ করে।
পরে পুলিশ এসে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক পবিত্র কুমার কুণ্ডু, সেবিকা কাকতি লতা পাল, এক পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ৪০ জন আহত হন।
ঘটনার পরপরই টুঙ্গিপাড়া বাজার এলাকার সব দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। ভাঙা কাচের আঘাতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনেক রোগী ও তাদের স্বজনরা আহত হয়। তারা আতঙ্কে দ্রুত হাসপাতাল ছেড়ে যায় এবং হামলার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে।