নতুন মেয়র বললেন, কেউ ছাড় পাবে না
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৫৫টি ওয়ার্ডের সচিব পদে কোনো ধরনের বদলি হয় না প্রায় দুই দশক ধরে। তাই নিরাপত্তা প্রহরী, পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক ও এমএলএসএসের পদ থেকে সচিব হয়ে দীর্ঘদিন ধরে একই ওয়ার্ডে কাজ করছেন এখানকার কর্মকর্তারা। অনেকেই একই ওয়ার্ডে কাজ করতে করতে অবসর নিয়েছেন এমন নজিরও রয়েছে। এতে নাগরিক সেবার পরিবর্তে স্বেচ্ছাচারিতা আর হয়রানি বেশি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিটি করপোরেশনে কাজ না করে বেতন তুলছেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরও খোঁজ মিলেছে। আর এদের তালিকা তৈরি করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন।
আজ মঙ্গলবার সকালে নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে করপোরেশনের জনপ্রশাসন বিভাগ, আদালত হিসাব, আইন হাকিম বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে আ জ ম নাসির উদ্দিনের মতবিনিময় সভার শেষ দিনে এসব তথ্য উঠে আসে। এ সময় মেয়র নাছির বিভিন্ন ওয়ার্ডের সচিবের কাছে জানতে চাইলে কেউ দুই যুগ ধরে একই অফিসে কাজ করার কথা জানান।
জানা যায়, নগরীর আলকরন ওয়ার্ডের সচিব পদে কর্মরত আবুল কাসেম নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কাজে যোগ দেন। সচিবের পদ শূন্য থাকায় গত দুই বছর ধরে পালন করছেন ওয়ার্ড সচিবের দায়িত্ব। ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সৈয়দুর রহমান কাজে যোগ দেন নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে বর্তমানে কাজ করছেন সচিবের। এর আগে সিটি করপোরেশনের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা প্রহরীর দায়িত্ব পালন করেন। জামাল খান ওয়ার্ডের মো. আইয়ুব পরিচ্ছন্ন পরিদর্শক হলেও ১৩ বছর ধরে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ওয়ার্ড সচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
সিটি মেয়র আ জ ম নাসির করপোরেশনের আইন অনুযায়ী দুই বছর পরপর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলির নীতিমালা মেনে চলার নির্দেশ দেন। এ ক্ষেত্রে কোনো বাধা সহ্য করা হবে না বলেও জানান তিনি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও হয়রানি চলছে উল্লেখ করে আ জ ম নাসির উদ্দিন, করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জনগণের সেবক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
নিজের বক্তব্যে নাসির বলেন, ‘একশত ভাগ সার্ভিস দিতে হবে। এইখানে কোনো ধরনের গাফিলতি, কোনো ধরনের অবহেলা, কোনো ধরনের অনিয়ম, কোনো ধরনের দুর্নীতি কোনোকিছুই আমি সহ্য করব না। এবং জিরো টলারেন্সের মাধ্যমে করব। আর এইগুলা ইমপ্লিমেন্ট করার ক্ষেত্রে এইখানে আমার মধ্যে, যেহেতু আমি একটি রাজনৈতিক দলের মহানগরের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছি, এইখানে আওয়ামী লীগ করলেও ছাড় পাওয়া যাবে না। এখানে কেউ যদি বলে আমি অমুক সময়ে ছাত্রলীগ করেছিলাম, যুবলীগ করেছিলাম, আমি ওমুক পদে ছিলাম, তবু কোনো ছাড় পাবে না। এইখানে যদি কেউ বলে আমার আত্মীয়, ছাড় পাবে না। আর আমার ভাই, বোন, মা কেউ সুপারিশ করে ছাড় পাবে না।’
এ সময় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আগামী দুই মাসের মধ্যে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে কাজ করে কাজের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেন নবনির্বাচিত মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন। এ ছাড়া নগরীতে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদের পাশাপাশি বৈধ বিলবোর্ড দ্বারা সৌন্দর্যহানি হলে তা-ও নজরে আনার পরামর্শ দেন তিনি।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কাজী শফিউল আলম ও সচিব রশিদ আহমেদ।