আমেরিকার ভিসা নীতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। আজ রোববার (৪ জুন) দুপুরে জাপা চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বাকশালের আদলে দেশ চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের প্রধানরা মিলে ‘আওয়ামী লীগ প্লাস’ গঠন করেছে। আর এতে ক্ষমতাসীন দলসহ  প্রশাসন, পুলিশ, প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ সবাই যুক্ত রয়েছেন। এমনকি, বিচার বিভাগসহ অন্যান্য সরকারি কমিশনকেও এর আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘বাকশালের আদলে দেশ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ প্লাস। আওয়ামী লীগের প্রধান যারা তারা এখন আওয়ামী লীগ প্লাস পরিচালনা করছেন। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন দল, প্রশাসন, পুলিশ, প্রতিরক্ষা বাহিনীসহ সবাই রয়েছেন। যে কাঠামোতে বাকশাল তৈরি করা হয়েছিল, ঠিক তেমন করেই আওয়ামী লীগ প্লাস সৃষ্টি করা হয়েছে। সংবিধান সংশোধন করে বাকশাল করা হলেও আওয়ামী লীগ প্লাস আইনগতভাবে করা হয়নি। বাকশালের জন্য কিছু আইন করা হলেও আওয়ামী লীগ প্লাসের জন্য করা হয়নি।’

বিরোধীদলীয় উপনেতা বলেন, ‘কয়েক দিন আগে আওয়ামী লীগের এক শিক্ষিত ও মার্জিত নেতা যেভাবে প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন, তাতে মনে হচ্ছে, বিচার বিভাগও আওয়ামী লীগ প্লাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চলছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, তারা এতটাই শক্তিশালী যে, আওয়ামী লীগ প্লাসের নির্দেশনা মেনে চলা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। কেউ না মানলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। মনে হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশনও আওয়ামী লীগ প্লাসের সদস্য হয়েছে। এতে দেশের মানুষের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করার ক্ষমতা কারও নেই।’

জি এম কাদের বলেন, ‘এমন বাস্তবতায় মানুষের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাওয়া বা মানবাধিকার রক্ষার জন্য কাজ করা আওয়ামী লীগ প্লাসের বাইরে চিন্তা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ প্লাসের বাইরে বের হতে না পারলে দেশে সঠিক রাজনীতি সম্ভব হবে না।’

সরকারে সব সংস্থাই আওয়ামী লাগ প্লাসের হয়ে কাজ করছেন জানিয়ে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ প্লাস) যাকে যেখানে কাজ করতে বলবেন, তিনি সেখানেই কাজ করবেন। অথবা যাকে নির্বাচন করতে বলবেন, তিনি নির্বাচিত হবেন। এভাবেই আওয়ামী লীগ প্লাস একটি দল দাঁড়িয়ে গেছে। সদস্য হোক বা না হোক, ইচ্ছায় হোক আর না হোক, সবাই সেই দলের নিয়ন্ত্রণে যেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রধান বিচারপতিকে সরিয়ে দেওয়ার কথা যিনি বলেছেন তিনি উচ্চ শিক্ষিত এবং ঠাণ্ডা মাথায় বলেছেন। এখন সবাই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছেন, এর বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। এমন বাস্তবতায় গণতন্ত্র আশা করা অসম্ভব।’

বর্তমান সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘যখন সমস্ত কিছুই আওয়ামী লীগ প্লাস বা সেই দলের নেতাদের নিয়ন্ত্রণে, সেখানে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না। তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে নির্বাচনের ফলাফল অসম্ভব। তারা কখনোই পরাজিত হতে চাইবে না।’

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি নিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘আমেরিকার ভিসা নীতি সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সহায়ক হবে। যারা এই নীতি ঘোষণা করেছেন তারা কতটা কার্যকর করেন তার ওপর নির্ভর করবে সব কিছু।’