সব ফয়সালা হবে রাজপথে : মির্জা ফখরুল
তরুণদের আগামীতে কঠিন ইস্পাত ঐক্য তৈরির মাধ্যমে আন্দোলন করে সরকারকে বিদায় করার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বিএনপি রাষ্ট ক্ষমতায় যেতে চায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে চায়। তরুণরা বিএনপিকে ক্ষমতায় নেওয়ার জন্য লড়াই করছে না, এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। সব ফায়সালা হবে রাজপথে।’
আজ বুধবার (১৪ জুন) বিকেলে চট্টগ্রামের কাজীর দেউরি মোড়ে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তরুণদের নিয়ে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল।
মীর্জা ফখরুল বলেন, ‘বেগম জিয়াকে বেআইনিভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রেখেছে সরকার। তাঁকে কারাগারে বিনা চিকিৎসায় রাখা হয়েছিল। আমরা বারবার সুচিকিৎসার ও মুক্তির দাবি করেছি। আমরা জানি না কারাগারে তাঁকে ফুড পয়জনিং করা হয়েছে কি না। কারণ এখনও তাঁর অবস্থা শোচনীয়। হাসপাতালে গুরুতর আহত অবস্থায় আছেন তিনি। তিনি জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। তারেক রহমানকে একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। বিরোধী দলের ৪০ লাখ মানুষের বিরুদ্বে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। তাঁর নেতৃত্বে আবার এ দেশকে স্বাধীন করব। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশের জন্য স্যাংশন আছে। আমেরিকা থেকে স্যাংশন। কেন র্যাবকে স্যাংশন দেওয়া হয়েছে। কারা র্যাবকে ব্যবহার করেছে। আমার ভাইকে গুম করতে কারা র্যাবকে ব্যবহার করেছে। এ সরকার তাদের অন্যায় ভাবে ব্যবহার করেছে।’
ভিসা নীতি নিয়ে সরকার ভয় পেয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা সরকার এবার যদি দিনের ভোট রাতে করতে যায় তাহলে তাদের রেহাই নেই। আর তাদের সময় দেওয়া যাবে না। আমাদের দেশের সব সম্পদ তারা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। এখন বিদ্যুৎ দিতে পারে না। একাধিকবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে টাকা নিয়েছে। মিটারের টাকা চলে যাচ্ছে। ১০০ টাকা ঢোকালে ৩০ টাকা নেই। বিদ্যুতের কার্ডে এক হাজার টাকা দিলে ৩০০ টাকা নেই। এসব টাকা আওয়ামী লীগের ঘরে চলে যায়।’
‘শেখ হাসিনা বলে উন্নয়ন করছে। কীসের উন্নয়ন করছে’ প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘কার উন্নয়ন। জনগণের টাকা দিয়ে কী উন্নয়ন করছে? মেগা প্রজেক্ট করছে। চট্টগ্রামে টানেল করছে। আগে মানুষের বাঁচা দরকার। পরে টানেল। আগে সন্তানদের লেখাপড়া নিশ্চিত করার কথা, আগে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। আগে চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে। কলকারখানা কোথায়? নতুন কি কোনো কারখানা তৈরি হচ্ছে? আগে যে কলকারখানা ছিল সেগুলো কমে যাচ্ছে।’
দেশের গার্মেন্টসগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে কোনো কিছু আমদানি হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না ডলার পাচার করার কারণে দেশ ডলার সংকটে পড়েছে। শুধু ভোট চুরি নয়, সম্পদ চুরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চুরি করে নিয়ে গেছে। সব খালি করে দিয়েছে। এ রকম চোর সরকার যদি আর এক দিনও থাকে দেশ মরীচিকায় ভরে যাবে। এটি ভারতীয় পত্রিকার খবর। উন্নয়নের নামে এখানে লুটপাট করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সাথে যারা জড়িত তারা ছাড়া আর কেউ লাভবান হচ্ছে না।’
‘আজকে জনগণের সব অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আদালতে গিয়ে যে ন্যায়বিচার পাব তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। নির্বাচন ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বরিশালে মেয়র পদে হেরে যাবে পীর সাহেবের কাছে তখন আবার ইভিএমে কারচুপি করে মেয়র পদে জয়ী হয়েছে। শুধু তাই না, পীর সাহেব শ্রদ্ধার মানুষ তাঁকে মারতেও দ্বিধা করেনি দলীয় লোকজন। নির্বাচনে জিততে রক্ত ঝড়াতে হয়েছে। বল প্রয়োগ করে, সন্ত্রাস করে জনগণকে ভোট দিতে দেয় না।’
তরুণদের উদ্দেশ্য মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা যৌবনে যুদ্ধ করে দেশটা স্বাধীন করেছি। আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। অনেক ছাত্রনেতা আছে স্বৈরাচারের সঙ্গে লড়াই করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছেন। আবার তরুণদের কঠিন ঐক্য ইস্পাত শপথ নিয়ে লড়াই করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
এই সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে আর বিশ্বাস করা যায় না। সব রাজনৈতিক দলকে এক করে আগামীতে আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সব ফয়সালা হবে রাজপথে।’
সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মীর মো. নাসির উদ্দীন, গোলাম আকবর খোন্দকার, মীর হেলাল, সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, এস এম জিলানী, ডা. শাহাদাত হোসেন, মোশারফ হোসেন দীপ্তি, এইচ এম রাশেদ খান প্রমুখ।
এর আগে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন আউটার স্টেডিয়ামে সমাবেশ করার জন্য অনুমতি চাইলে জেলা প্রশাসন তাতে রাজি হয়নি। পরে পুলিশের অনুমতি নিয়ে কাজীর দেউড়ি মোড়ে সামবেশের আয়োজন করে তারা। সড়কে দুটি ভেহিক্যাল পাশাপাশি রেখে তৈরি করা হয় সমাবেশ মঞ্চ।
এই সমাবেশের কারণে চট্টগ্রামের কিছু এলাকা যানজটের কবলে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়ে।