অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম
অসুস্থ হয়ে মাসখানেক আগে ঢাকার ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস ও হাসপাতাল ভর্তি হন ৫২ বছর বয়সী তাসলিমা বেগম। চিকিৎসা শেষে আজ শনিবার (২৪ জুন) সকালে অ্যাম্বুলেন্সে করে দুই মেয়ে নাতি-নাতনিদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি ফিরছিলেন। তবে, আর বাড়ি ফেরা হলো না তাদের। অ্যাম্বুলেন্সটি ফরিদপুরের ভাঙ্গার চান্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রাম ফ্লাইওভার এলাকার ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে পৌঁছালে রেলিংয়ের সঙ্গে ধাক্কা লেগে যানটিতে আগুন লাগে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সাতজন। পরে, বিকেলের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান অ্যাম্বুলেন্স চালকও।
ঘটনাস্থলে মারা যাওয়াদের মধ্যে সাতজনই একই পরিবারের। এর মধ্যে চারজনই শিশু। নিহতরা হলেন–বোয়ালমারী উপজেলার গুনবহা ইউনিয়নের ফেলান নগর গ্রামের প্রবাসী আজিজার রহমানের স্ত্রী তাসলিমা বেগম (৫৫), তার দুই মেয়ে কমলা পারভিন (২৬) ও বিউটি বেগম (২৪), নাতি হাসিব (৮), হাফসা (২), আরিফ (১২), মেহেদি (১২) ও অ্যাম্বুলেন্স চালক মৃদুল মালো (২৫)। এর মধ্যে কমলা পারভিন রাজধানীর চকবাজার এলাকায় বসবাস করতেন। ছোট মেয়ে বিউটি বেগম উপজেলার শেখর ইউনিয়নের মাইটকুমরা গ্রামের মাহমুদ ইসলাম রনির স্ত্রী।
এদিকে, একই পরিবারের সাতজন নিহতের ঘটনায় তাদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। গোটা এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহত তাসলিমা বেগমের আরেক মেয়ে চায়না বেগম (২৫) এবং ছেলে আনিচ শেখ (১৮) কান্নায় মুষড়িয়ে পড়ছেন।
কান্না করতে করতে চায়না বেগম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এক মাস মাকে দেখি না। চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে মা বাড়ি ফিরে আসছিল। কিন্তু, নির্মম সড়ক দুর্ঘটনায় মা-সহ বোন, ভাগ্নে ও ভাগ্নিদের হারালাম। এ শোক আমরা কীভাবে সইব।’
তাসলিমা বেগমের ভাসুর মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ‘তাসলিমার আরেক ছেলে আনিচ এখনও জানেন না তার মা মারা গেছেন। সকাল ৯টার দিকে মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে শেষ কথা হয়। তারপরে, আর যোগাযোগ করতে পারেনি। তারা দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে আছে এটুকুই জানে।’
মাসুদুর রহমান বলেন, ‘তাসলিমার স্বামী আজিজ শেখ বিদেশে থাকে। মাসখানেক আগে তাসলিমা হৃদরোগজনিত কারণে ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি হয়। চিকিৎসা শেষে আজ সকালে পরিবার নিয়ে বাড়ি ফিরছিল।’
এদিকে, একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর খবরে বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোশারেফ হোসাইন, থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব, গুনবহা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম তাসলিমার বাড়িতে যান। নিহতদের দাফনের জন্য নিহত প্রতিজনকে প্রাথমিকভাবে ২০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা জানান ইউএনও।
আব্দুল ওহাব বলেন, ‘দুর্ঘটনার খবর পেয়ে আমরা তাসলিমার বাড়িতে ছুটে যায়। এলাকার চেয়ারম্যানের সহায়তায় পরিবার ও এলাকার লোকজনদের মরদেহ আনার জন্য হাসপাতালে পাঠানো ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
ইউএনও মোশারেফ হোসাইন বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই হৃদয় বিদারক। বোয়ালমারীতে এমন ঘটনা এর আগে ঘটেনি। খবর পেয়ে আমরা নিহত পরিবারের খোঁজ খবর নিতে ছুটে যায়। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উপজেলা প্রশাসন নিহত তাসলিমার পরিবারকে সার্বিক সহযোগিতা করবে।’
ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার জানান, এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বিপুল চন্দ্রকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।