ছয় মাসে কর্মক্ষেত্রে ২৮৭ দুর্ঘটনায় ৩৮৯ জন শ্রমিক নিহত
দেশে চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত) কর্মক্ষেত্রে ২৮৭ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয়েছেন ৩৮৯ শ্রমিক। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নিহতের সংখ্যা বেশি। ২০২২ সালে একই সময়ে সারা দেশে ২৪১ কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ৩৩৩ শ্রমিক নিহত হয়েছিলেন।
আজ সোমবার (৩ জুলাই) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে সেইফটি অ্যান্ড রাইটস (এসআরএস)।
জরিপের প্রতিবেদন উল্লেখ করে এসআরএস জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি শ্রমিক নিহত হয়েছে পরিবহণ খাতে। এই খাতে নিহত হয়েছে ১২৮ জন। ৮৬ মৃত্যু নিয়ে এরপরেই রয়েছে নির্মাণ খাত। তালিকায় এরপরেই রয়েছে সেবামূলক খাত (যেমন- ওয়ার্কশপ, গ্যাস, বিদ্যুৎ সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি)। এই খাতের কর্মক্ষেত্রে নিহত হয়েছে ৮৫ জন। কল-কারখানা ও অন্যান্য উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানে এই সংখ্যা ৫০ জন। এবং কৃষি খাতে ৬২ শ্রমিক নিহত হয়েছে।
মৃত্যুর কারণ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭৩ জন, বিস্ফোরণে ৫০ জন, বজ্রপাতে ৪০ জন, মাচা বা ওপর থেকে পড়ে ৩২ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩০ জন, শক্ত বা ভারী কোনো বস্তুর দ্বারা আঘাত বা তার নিচে চাপা পড়ে ২২ জন, রাসায়নিক দ্রব্য বা সেপটিক ট্যাঙ্ক বা পানির ট্যাঙ্কের বিষাক্ত গ্যাসে ১২ জন, আগুনে পুড়ে আটজন, পানিতে ডুবে পাঁচজন, পাহাড় বা মাটি, ব্রিজ, ভবন বা ছাদ, দেওয়াল ধসে চারজন এবং অন্যান্য কারণে আটজন নিহত হয়েছে।
পরিবহণ খাতে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে জরিপে বলা হয়, পরিবহণ ব্যবস্থা অনিয়ন্ত্রিত। এই খাতে আইন প্রয়োগে বাধা, বেপরোয়া যান চলাচল ও অদক্ষ চালক ইত্যাদি হলো দুর্ঘটনার মূল কারণ।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এসআরএস বলছে, কেমিক্যাল সংরক্ষণে অদক্ষতা ও অবহেলা, অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, কারখানার ভবনে জরুরি বহির্গমন পথ না থাকা, বহির্গমন পথ তালাবদ্ধ করে দেওয়া, কারখানা নির্মাণে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি না নেওয়া, সেইফটি বিষয়ে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণ না দেওয়া, নিয়মিত অগ্নি নির্বাপণ মহড়া না করা করা দায়ী। কোনোরকম নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই বৈদ্যুতিক লাইন সংযোগ দেওয়া, ভেজা হাতে মোটর চালু করা, মাথার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিদ্যুতের লাইনের নিচে কাজ করা, ভবনের পাশে দিয়ে বয়ে যাওয়া বৈদ্যুতিক তারের পাশ দিয়ে লোহার রড ওঠানোকে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলছে এসআরএস। এ ছাড়া ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার না করার কারণেও কিছু দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।
এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। বিভিন্ন ছোট বড় বিস্ফোরণের ঘটনাও এই ছয় মাসে পরিলক্ষিত হয়েছে। বজ্রাঘাতে কৃষি খাতের শ্রমিকদের মৃত্যু বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেইসঙ্গে নির্মাণ খাতের নিরাপত্তা ঘাটতি রয়েছে।’