টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার ভাঙনে দিশেহারা মানুষ
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনার ভাঙনে কয়েকদিনে প্রায় শতাধিক বসতবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদীপাড়ের মানুষ। ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড জিও ব্যাগ ফেললেও তা কোন কাজে আসছে না। যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি ছাড়াও ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা হুমকির মধ্যে পড়েছে। অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিলেও আবার অনেকে সরিয়ে নেওয়ার সুযোগও পাচ্ছে না।
টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর উপজেলার যমুনা তীরবর্তী চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা ও ভালকুটিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে এ ভাঙন দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, একের পর এক ঘরবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বসতঘর সরিয়ে নেওয়ার সময়ও যেন পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে দূরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা গেছে। তারা এসব স্থানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের আশ্বাসও দিয়েছেন। উপজেলার গোবিন্দাসী, কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, চিতুলিয়াপাড়া, খানুরবাড়ী, কোনাবাড়ী, মাটিকাটা, সিরাজকান্দি, পাটিতাপাড়া, সারপলশিয়া, নলশিয়া, ন্যাংড়া বাজার, রায়ের বাশালিয়া, কুঠিবয়ড়া, অর্জুনা, জগৎপুরা, বাসুদেবকোল, রামাইল, মেঘারপটলসহ কয়েকটি গ্রামে গিয়ে ব্যাপক ভাঙনের চিত্র দেখা গেছে। এসব এলাকায় নদীতে বিলীন হচ্ছে বসতভিটা, ঘরবাড়ি, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা। ভাঙনের কারণে গৃহহীন মানুষ বাঁধে ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তরা সামান্য ত্রাণসাগ্রীর চাইতে একটি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্যে দাবি জানাচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতে যমুনার পানি আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে নদী পাড়ের এলাকায় প্রচণ্ড ভাঙন দেখা দেয় চরাঞ্চলের ফসল পাট ও তিলসহ নানা ধরনের ফসল তলিয়ে যাচ্ছে। মানবেতর জীবনযাপন করছে ভাঙন কবলিতরা।
উপজেলার খানুরবাড়ী এলাকার তায়েজউদ্দিন জানান, প্রতিবছর বন্যায় এ এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। তবে এ বছর ভাঙনের মাত্রা অনেক বেশি। প্রতিদিনই কোন না কোন বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একই এলাকার জমসের আলী জানান, শুধু বাড়িঘর নয়- ফসলি জমিও নদীতে চলে যাচ্ছে।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন জানান, ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন প্রতিরোধ করা হচ্ছে। পাশের জেলা সিরাজগঞ্জের চৌহালী এলাকায় সাড়ে তিন কিলোমিটার প্রতিরক্ষা দেওয়াল নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। বর্ষা মৌসুমের পরে এই প্রকল্পের আওতায় টাঙ্গাইলের নাগরপুর অংশের কাজ করা হবে। এ ছাড়া ভূঞাপুর অংশে ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে।
সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ছোট মনির জানান, ভূয়াপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া, কষ্টাপাড়া, খানুরবাড়ী ও পাটিতাপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। আপাতত এসব ভাঙন কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলা শুরু হয়েছে। এখানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে।