জয়পুরহাটে সংঘর্ষ : বিএনপির অফিস ভাঙচুর, পুলিশের ফাঁকা গুলি
জয়পুরহাটে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ৪০ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে জেলা বিএনপির অফিস। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারশেল ও শটগানের ফাঁকা গুলি ছুড়েছে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৪টার জেলা শহরের রেলগেট এলাকার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রাথমিক অবস্থায় ১০ থেকে ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। অপরদিকে, ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি বিএনপির। তবে, পুলিশি হয়রানির শঙ্কায় আহত নেতাকর্মীরা কেউ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়নি বলে জানান স্থানীয় বিএনপি নেতারা।
জানা গেছে, জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে মোট ১৫ আহতকে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুত্বর আহত অবস্থায় ইফাত নামে এক ছাত্রলীগ কর্মীকে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রাশেদ মোবারক হাসপাতালে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দেশব্যাপী কেন্দ্রীয় কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বিকেলে আওয়ামী লীগ জয়পুরহাট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ সংলগ্ন জেলা কার্যালয়ের সামনে বিকেল ৪টায় শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সেখানে থেকে শান্তি মিছিল নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে সাড়ে ৪টার দিকে রেল লাইনের পূর্বপাশে প্রধান সড়কে জেলা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয়।
একই সময় শহরের নতুনহাট থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্টেশন রোড হয়ে পদযাত্রা নিয়ে তাদের পার্টি অফিসের পাশে রেলগেট এলাকায় আসে। রেললাইনের পশ্চিম পাশে নিজেদের জেলা কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেয় তারা। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। এতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে। একপর্যায়ে দুদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয় ও পরে যা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির জেলা কার্যালয়ে ঢুকে আসবাব ও জানালা ভাঙচুর করা হয়। পরে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ১১ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়লে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বর্তমানে শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক গোলজার হোসেন বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা শেষ করে আমাদের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় অতর্কিতভাবে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিনা উসকানিতে ইট-পাটকেল ছুড়ে। তারা লাঠিসোটা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেটে আমাদের গুলিবিদ্ধসহ ২৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন মণ্ডল বলেন, ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা শেষে আমাদের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিচ্ছিল। এ সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর রেল লাইনের পাথর ছুড়তে থাকে। এতে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে আমাদের ১০ থেকে ১৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছে।’
এ বিষয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ ও বিএনপির পদযাত্রার শেষ সময়ে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। এ সময় শটগানের পাঁচ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।’
জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য শহরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’