প্রতারিত থেকে প্রতারক, দিতেন ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয়
নজরুল ইসলাম (২৯) কাস্টমস বিভাগে বেশ কয়েকবার চাকরি চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। টাকা খুইয়েছেন। একপর্যায়ে নিজেই সাজেন ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা। গড়ে তোলেন প্রতারক চক্র। তিনিসহ তার কয়েকজন সহযোগীকে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এসব তথ্য জানিয়েছে র্যাব।
আজ বুধবার (১৬ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
র্যাব জানায়, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সফি মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে কাস্টমসে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। চাকরির জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রতারকদের টাকা দিয়ে প্রতারিত হন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে নজরুল ইসলামসহ চার জনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব–১০। গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- ওয়ায়েশ করোনী ওরফে সেলিম (৪৭), নাসির উদ্দিন (২৬) ও সৈয়দ মো. এনায়েত (৪৮)। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার, দুটি মোটরসাইকেল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়।
খন্দকার আল মঈন জানান, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সফি মিয়ার ছেলে নজরুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় একটি কলেজ থেকে ডিগ্রি পাস করে কাস্টমসে চাকরির জন্য আবেদন করেছিলেন। চাকরির জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রতারকদের টাকা দিয়ে প্রতারিত হন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘প্রথমে ২০১২ সালে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে চাকরি পেতে এক প্রতারককে ১১ লাখ টাকা দিলেও চাকরি পাননি। প্রতারকদের মাধ্যমে ২০১৩ সালে নৈশ প্রহরী ও ২০১৭ সালে উচ্চমান সহকারী হিসেবে চাকরি পাওয়ার আশায় পুনরায় আবেদন করে প্রতারিত হয়। কাস্টমসে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সময় বিভিন্ন কর্মকর্তার সান্নিধ্যে আসার সুবাদে তিনি এই সংস্থার কার্যক্রম সম্পর্কে ভালো ধারণা লাভ করেন।’
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘এরপর নিজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে অর্থ আত্মসাতের লোভে একটি প্রতারক চক্র গড়ে তোলেন নজরুল। প্রতারণা করার জন্য তিনি নিজেকে এলাকায় ঊর্ধ্বতন কাস্টমস অফিসার হিসেবে পরিচয় দিতেন। এক সময় তাঁর মাধ্যমে কাস্টমসের পিয়ন, ঝাড়ুদার ও অন্যান্য পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চার থেকে পাঁচ জন চাকরি পান। তবে, তাদের চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে নজরুলের কোনো হাত ছিল না। ওই চাকরি পাওয়া ব্যক্তিরা এলাকায় প্রচার করেন যে, তারা নজরুলের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন। এভাবে তিনি বিশ্বস্ততা অর্জন করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। চক্রটি গত ২ বছরে ভুয়া পরিচয়ে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেন প্রায় চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। চক্রটি প্রায় বছর ধরে এই প্রতারণা কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তাদের মোট সদস্য সংখ্যা সাত থেকে আট জন।’
খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নজরুল বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরে বিদেশ থেকে আসা স্বর্ণ ও মালামাল অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেও টাকা হাতিয়ে নিতেন। প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎকৃত অর্থ দিয়ে তিনি ফ্ল্যাট বুকিং, জমি ক্রয়, বাড়ি ও বিভিন্নভাবে তাঁর নামে অর্থ সম্পদ গড়ে তুলেছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা ১৭ জন ভুক্তভোগীর তথ্য পেয়েছি। যাদের কাছ থেকে প্রায় দেড় কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নিয়েছেন নজরুল। এলাকায় ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে প্রায় ৪-৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে জানা গেছে, তবে তদন্তে বাকিটা বের হয়ে আসবে।’