এস আলমের খবর প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেননি আদালত
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2023/09/14/high-court-ntv.jpg)
বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধান সংক্রান্ত বিচারাধীন বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যমে খবর প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এস আলম গ্রুপের আবেদন নথিভুক্ত করেছেন আদালত। সেইসঙ্গে আদালত আদেশে বলেছেন, আবেদনকারীরা ইচ্ছাপোষণ করলে নথিভুক্ত আবেদনটি ৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগে নির্ধারিত ‘স্ট্যাটাসকো’র শুনানির সঙ্গে শুনানি করতে পারবেন। গ্রুপটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও পরিচালক ফারজানা পারভীনের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত এই আদেশ দেন।
আদালতে এস আলম গ্রুপের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধান সংক্রান্ত বিচারাধীন বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গণমাধ্যমে খবর প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এস আলম গ্রুপের আবেদনের শুনানিতে চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, ‘আমাদের সবার দায়িত্ব আদালতের মর্যাদা রক্ষা করা।’ কোনো রায় পক্ষে গেলে ‘ঐতিহাসিক’, আর বিপক্ষে গেলে ‘ফরমায়েশি’ বলা হয়।
শুনানির একপর্যায়ে এস আলমের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি বলেন, ‘আমাদের মনে হচ্ছে এস আলম নিয়ে একটা মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে।’
তখন আদালত বলেন, ‘সবাই আমরা ট্রায়ালের শিকার। কোনো রায় পক্ষে গেলে ঐতিহাসিক আর বিপক্ষে গেলে বলা হয় ফরমায়েশি রায়। তবে আমাদের সবারই দায়িত্ব আদালতের মর্যাদা রক্ষা করা।’
আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, ‘দুর্নীতির তথ্য পেলে গণমাধ্যম রিপোর্ট করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। এখানে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সুযোগ কোথায়? তবে প্রকাশিত রিপোর্ট সত্য না মিথ্যা কিংবা উদ্দেশপ্রণোদিত কি-না, সেটা বিচার করার জন্য সুনিদ্দিষ্ট আইন ও বিধান রয়েছে। তবে, সবারই নীতিমালা মেনে চলা উচিত।’
আজকে শুনানিতে দুদকের পক্ষের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদালতকে বলেন, ‘গণমাধ্যমের রিপোর্ট হলো আমাদের দুদকের অন্যতম সোর্স। প্রায় ৫০ ভাগ অনুসন্ধান আমরা গণমাধ্যমের সূত্র ধরে করে থাকি। তাই মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশের ওপর (বার) নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে সেটার প্রভাব আমাদের দুদকের ওপর পড়বে।’
সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞার দেওয়ার মতো কোনো প্রাথমিক উপাদান দেখতে পাচ্ছি না উল্লেখ করে একপর্যায়ে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত গণমাধ্যমে খবর প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে এস আলম গ্রুপের আবেদন নথিভুক্ত করার আদেশ দেন। সেই সাথে আদালত আদেশে বলেন, আবেদনকারীরা ইচ্ছাপোষণ করলে নথিভুক্ত আবেদনটি ৮ জানুয়ারি আপিল বিভাগে নির্ধারিত ‘স্ট্যাটাসকো’র শুনানির সঙ্গে একসাথে শুনানি করতে পারবেন।
আদালতে এস আলম গ্রুপের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ ও ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কেসি। আর দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান।
এস আলম ও তাঁর স্ত্রীর পক্ষে গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন করা হয়। আবেদনে এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলম ও তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনের বিদেশে সম্পদের বিষয়ে সংবাদ, বিবৃতি, মতামত ও অনলাইনে কোনো ভিডিও প্রকাশ বা সম্প্রচারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়। আবেদনটির ওপর আজ বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আদেশ দেন।
এর আগে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এ ‘এস আলম’স আলাদিন’স ল্যাম্প’ (এস আলমের আলাদিনের চেরাগ) শিরোনামে ৪ আগস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে অনুমতি ছাড়া বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তর নিয়ে এস আলম গ্রুপের মালিক ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধান করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে রুল দিয়ে আদেশ দেন হাইকোর্ট।
গত ৬ আগস্ট দেওয়া ওই আদেশের বিরুদ্ধে এস আলম ও তার স্ত্রী আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করেন। ২৩ আগস্ট আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত বিষয়বস্তু সম্পর্কে সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দেন এবং আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে লিভ টু আপিলটি শুনানির জন্য আগামী বছরের ৮ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন।
‘এস আলমের আলাদিনের চেরাগ’ শিরোনামে গত ৪ আগস্ট ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চের নজরে আনলে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে রুলসহ আদেশ দেন।
হাইকোর্ট তার আদেশে এস আলম গ্রুপের বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরের অভিযোগের সত্যতা অনুসন্ধানের নির্দেশ দিয়ে দুই মাসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। তবে হাইকোর্টের নির্দেশের ওপর আগামী ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ‘স্ট্যাটাসকো’ দিয়ে বিষয়টি ওইদিন আপিল বিভাগে শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে এস আলমের করা আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের চেম্বার আদালত গত ২৩ আগস্ট ‘স্ট্যাটাসকো’র আদেশ দেন।