অবরোধের সমর্থনে রাজধানীতে ১২ দলীয় জোটের বিক্ষোভ
টানা ৭২ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচির প্রথম দিনে আজ মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ১২ দলীয় জোট। মিছিলটি পুরানা পল্টন মোড় ঘুরে আবারও জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জোটের নেতারা বলেন, ‘আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে আওয়ামী লীগ এবং তার ফ্যাসিবাদী সরকারের অনুগত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সরকারের নির্যাতন ও অনিয়মের বিরুদ্ধে যারাই প্রতিবাদ করেছেন, সমালোচনা করেছেন, তাদের বিরুদ্ধেই অত্যাচার ও মামলার খড়গ নেমে এসেছে। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের কবলে পড়ে অসংখ্য রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সাংবাদিক, লেখক, কলামিস্ট ও সুশীল সমাজের অন্যান্য সদস্যরা অত্যাচারিত হয়েছেন, পুলিশি হেফাজতে ও কারাগারে নির্যাতনে মারা গেছেন। গুমঘর ও আয়নাঘরের দেয়ালে দেয়ালে লেখা হয়েছে অসংখ্য বেদনার ইতিহাস। বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুম হয়ে যাওয়া নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্য আর ছোট্ট অবুঝ সন্তানদের চোখের পানি শুকিয়ে গেছে।’
বক্তারা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এসব মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সোচ্চার রয়েছে এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে এসব মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত, তার সুনির্দিষ্ট প্রমান দাখিল করেছে।’
নেতারা আরও বলেন, ‘নজিরবিহীন অত্যাচার, নির্যাতন ও খুনের শিকার হয়েও গণতন্ত্রের পক্ষের দলগুলো সহিংসতার পথ বেছে নেয়নি। নেতাকর্মীরাও শান্তিপূর্ণ ও অহিংস আন্দোলনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে গণতন্ত্রের পক্ষের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন এবং ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একত্রে জোর আন্দোলন গড়ে তুলেছেন। গণতন্ত্রের পক্ষের সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশগুলো একটি সুষ্ঠু ও অংশীদারিত্বমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সরকারকে চাপ দিচ্ছেন।’
বিক্ষোভ মিছিলে ১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান ও জোটের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) রাশেদ প্রধান, ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার নওয়াব আলী আব্বাস খান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মুফতি জাকির হোসেন, জাগপার সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন প্রধান, বাংলাদেশ এলডিপির অতিরিক্ত মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু, সহসভাপতি সৈয়দ ইব্রাহিম রওনক, ইসলামী ঐক্যজোটের যুগ্ম মহাসচিব ইসমাইল রেজা, কল্যাণ পার্টির অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব, নূরুল কবির পিন্টু, জাতীয় দলের ভাইস চেয়ারম্যান শামসুল আহাদ ও সারোয়ার আলম।
দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে হামলা, নেতাকর্মীদের হত্যা, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আন্দোলনরত বিভিন্ন দলের সহস্রাধিক নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি ও নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আজ ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। একইসঙ্গে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, এলডিপি, এবি পার্টিসহ কয়েকটি দল ও জোট অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা ও সমর্থন করেছে।