ষোড়শ সংশোধনী : ছয় বিচারপতির বেঞ্চে শুনানির বিষয়ে আদেশ ২৩ নভেম্বর
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিলের রিভিউ শুনানি ছয়জন বিচারপতির বেঞ্চ শুনতে পারবেন কি না, এ বিষয়ে আদেশ আগামী ২৩ নভেম্বর দিন ধার্য করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে ছয় বিচারপতির বেঞ্চ এ দিন ধার্য করেন।
ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের শুনানি আজ আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ছিল। এদিন শুনানি পিছিয়ে দেওয়ার জন্য সময় আবেদন করেন রিটকারী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। আপিল বিভাগের সাতজন বিচারপতি ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় দিয়েছিলেন। কিন্তু, এখন আপিল বিভাগে ছয়জন বিচারপতি রয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ বলেন, ‘দীর্ঘদিনের কাস্টমস (প্রথা) অনুযায়ী কোনো রায়ের রিভিউ সমসংখ্যক বা বেশি বিচারপতির বেঞ্চে শুনে থাকেন।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনি যে প্রশ্ন উপস্থাপন করেছেন, আমরা এখনই এ বিষয়ে সিনিয়রদের (জ্যেষ্ঠ) আইনজীবীদের মতামত নিতে চাই। এরপর আপিল বিভাগে একে একে কয়েকজন সিনিয়র আইনজীবী মতামত তুলে ধরেন।’
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কামরুল হক সিদ্দিকী নিজের মত প্রকাশ করে বলেন, ‘সমসংখ্যক বা তার বেশি বিচারপতির বেঞ্চে রিভিউ আবেদনটি শুনানি হওয়াই শ্রেয়। ছয়জন বিচারপতির বেঞ্চে এই রিভিউ শুনানি হলে নতুন প্রশ্নের সৃষ্টি হতে পারে।’
মতামত নেওয়া শেষে আপিল বিভাগ এ বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) দিন ধার্য করেন। একইসঙ্গে মতামতের সপক্ষে রেফারেন্স সংশ্লিষ্ট আইনজীবীদের আগামী মঙ্গলবারের (২১ নভেম্বর) মধ্যে আদালতে জমা দিতে বলেন।
২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ সদস্যদের হাতে এনে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদন দাখিল করা হয়।
আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় রাষ্ট্রপক্ষ ৯০৮ পৃষ্ঠার এ রিভিউ আবেদনে ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে ৯৪টি যুক্তি দেখিয়ে আপিল বিভাগের রায় বাতিল চেয়েছে।
২০১৭ সালের ৩ জুলাই তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। ৮ মে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি শুরু হয়। ধারাবাহিকভাবে ১১ দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
আপিল শুনানিতে আদালতে মতামত উপস্থাপনকারী ১০ অ্যামিকাস কিউরির (আদালতের বন্ধু) মধ্যে শুধু ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর পক্ষে মত দেন।
অপর নয় অ্যামিকাস কিউরি ড. কামাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আই ফারুকী, আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ এফ এম হাসান আরিফ ব্যারিস্টার এম. আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বিপক্ষে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
২০১৭ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ষোড়শ সংশোধনীর আপিল শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ। ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।
২০১৬ সালের ৫ মে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় ঘোষণা করেন।