আ.লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে অগ্রাধিকার পাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আগামী ৭ জানুয়ারি। নির্বাচনে অংশ নিতে জোরেসোরে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলীয় মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্ত করেছে তারা। আগামীকাল রোববার (২৬ নভেম্বর) ঘোষণা করা হবে মনোনয়নপ্রাপ্তদের নাম। পাশাপাশি ৩০০ আসনে মনোনয়ন দেবে বলে জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। দল থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে তারা। এ ছাড়া, ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ (ইনু), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনসহ (বিএনএম) বেশ কিছু দলও নির্বাচনে লড়তে নিচ্ছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। দলীয় ইশতেহার কেমন হবে, তা নিয়েও ভেবেছে দলগুলো। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে অগ্রাধিকার পাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ।
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গত ১৮ নভেম্বর (শনিবার) থেকে দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু করে। ২১ নভেম্বর পর্যন্ত মোট তিন হাজার ৩৬২ মনোনয়নপত্র বিক্রি করে দলটি। এরমধ্যে ১২১টি অনলাইনে ও তিন হাজার ২৪১টি মনোনয়নপত্র সরাসরি বিক্রি হয়। আর এতে আওয়ামী লীগের আয় হয়েছে ১৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন, আগামীবকাল রোববার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। তার আগে দলের সাধারণ সম্পাদক ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমকে বলেছেন, রোববারের মধ্যে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এরপর আজ রাজধানীতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন-বিএফডিসিতে ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণবিষয়ক ছায়া সংসদের গ্র্যান্ড ফাইনাল ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইশতেহার নিয়ে কথা বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে তিনি জানান, ‘আওয়ামী লীগের ইশতেহারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে।’
করোনা পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এর প্রভাব আমাদের দেশেও পড়েছে। এতে করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটি সত্যি।’ দ্রব্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের যৌথ ভূমিকা মূখ্য বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
টিপু মুনশি বলেছেন, ভোক্তাদের সচেতন ও প্রতিবাদী হতে হবে। সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কোনো শক্তিই টিকতে পারবে না। এই উদ্যোগ মানুষকে সচেতন করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য। দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে হয়তো শতভাগ করা সম্ভব হয়নি। তবে, বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় আমাদের সফলতা আছে।’
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতিহারে আওয়ামী লীগ বলেছিল, এইচবিএসসির প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের ২৬তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হবে।
“একাদশ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা আবারও ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শ্লোগান সংবলিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহার নিয়ে হাজির হয়েছি” উল্লেখ করে বলা হয়, ‘আমরা আমাদের ইশতেহার এমনভাবে তৈরি করেছি যাতে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে পারি। একইসঙ্গে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা ২০১৮-এর নির্বাচনি ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে।’
ইশতেহারে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও কার্যকর সংসদ, আইনের শাসন ও মানবাধিকার সুরক্ষা, দক্ষ, সেবামুখী ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন, জনবান্ধব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গড়ে তোলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা ও মাদক নির্মূল, স্থানীয় সরকার: জনগণের ক্ষমতায়ন, সামষ্টিক অর্থনীতি: উচ্চ আয়, টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, অবকাঠামো উন্নয়নে বৃহৎ প্রকল্প (মেগা প্রজেক্ট), ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’: প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ, তরুণ যুবসমাজ : ‘তারুণ্যের শক্তি, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি’, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, নারীর ক্ষমতায়ন, বিদ্যুৎসহ দেশকে এগিয়ে নিতে সব খাতই তুলে ধরা হয়।