বিএনপি ও সমমনাদের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু রোববার
বিএনপি ও তাদের সমমনা দলগুলোর ডাকা সপ্তম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হচ্ছে আগামীকাল রোববার (২৫ নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এই অবরোধের ডাক দেন। আজ বিকেলে অপর এক ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনি অবরোধে নেতাকর্মীদের দুর্জয় সাহস নিয়ে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছেন।
অবরোধ ঘোষণার দিন রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অবৈধ ও এক তরফা তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ আহ্বান করা হচ্ছে।
আজ সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অবরোধ সফলের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগামীকাল থেকে শুরু হবে আবারও নিরবিচ্ছিন্ন ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি। গণতন্ত্র ফেরানো, আজকে অন্যায়ভাবে গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা মানুষজনকে কারাবন্দি করা এবং তাদের মুক্ত করার যে কর্মসূচি, জনগণের মালিকানা ফেরত দেওয়ার যে কর্মসূচি সেটা হচ্ছে এই অবরোধ কর্মসূচি।
বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, শান্তিপূর্ণ এই অবরোধ কর্মসূচিতে গণতন্ত্রমনা মানুষ, সাধারণ জনগণ এবং দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা দুর্জয় সাহস নিয়ে রাজপথে এগিয়ে যাবে—এই প্রত্যয়, এই আশাবাদ আমি ব্যক্ত করছি। এই আন্দোলনে আপনি, আমি-আমরা একা নই, আমাদের সবার অংশগ্রহণে এক দফার আন্দোলন আরও বিস্তৃত, বেগবান ও তেজোদীপ্ত হবে। মনে রাখবেন, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিও আর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায় না, এদের পতন হবেই।
রিজভী বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন জনগণ তাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ভার পরবর্তী মেয়াদের জন্য কাদের হাতে অর্পণ করতে চায়, তা সংখ্যাগরিষ্ঠের সিদ্ধান্তের আলোকে নির্ধারণ করে দেয়। সেই নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আর জনপ্রতিনিধিত্ব এখন শেখ হাসিনার দান-দক্ষিণা, খয়রাত, বিলি-বণ্টন, ভাগ-বাটোয়ারা, উপহার-করুণায় পরিণত হয়েছে।’
রিজভী বলেন, “রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে টার্গেট করে অর্থ ও এমপি বানানোর প্রলোভনে কিংসপার্টি-ভূঁইফোড় পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢোকানো হচ্ছে। তবে, কোনো নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নিতে পারছে না। কতিপয় ডিগবাজিমার্কা-ভ্রষ্টচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচনি রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কব্জা করেছে। টাকার বিনিময়ে খরিদ হওয়া এইসব রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের কেউ কেউ এখনই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শংকা প্রকাশ করেছেন। কারণ তারা টাকা ও ক্ষমতার মুলোর লোভে পড়ে ডিগবাজি দেওয়ার পর এখন বুঝতে পারছেন, তাদের ভাগ্যে শিকে ছিঁড়বে না। পাতানো খেলার সাজানো নির্বাচনে ‘হার হাইনেস’ যাকে যাকে চাইবেন…তারাই হবেন এমপি, তারাই হবেন ক্ষমতাশালী, অন্য কেউ না।”
এর আগে মহাসমাবেশে বাধা ও নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। গত ৩১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে প্রথম দফায় সারা দেশে তিন দিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু করে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি বিরোধী দল। তিন দিনের অবরোধের শেষ দিন ২ নভেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ফের অবরোধ কর্মসূচির ঘোষণা দেন। সেই ঘোষণা অনুযায়ী, ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা অবরোধ শুরু হয়। এরপর তৃতীয় দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ৮ নভেম্বর শুরু হয়ে ১০ নভেম্বর সকাল ৬টায় শেষ হয়। এরপর চতুর্থ দফার অবরোধ শুরু হয় ১২ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে, যা শেষ হয় মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ৬টায়। পরে ১৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলটি। এরপর নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি শেষ হয় মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) সকাল ৬টায়। পরে ২২ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে দলটি। শুক্রবার ২৪ নভেম্বর সকাল ৬টায় শেষ হয় এই অবরোধ কর্মসূচি।