নির্বাচন আওয়ামী লীগকে নির্বাসনে পাঠাবে : মান্না
একতরফা নির্বাচন আওয়ামী লীগকে নির্বাসনে পাঠাবে মন্তব্য করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, যেভাবে চেষ্টা করুক, তারা এ নির্বাচন প্রহসনের বাইরে আর কিছু করতে পারবে না। আমরা বলছি, জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে এই নির্বাচন, বিশ্বাবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে এই নির্বাচন।
গণতন্ত্র মঞ্চের উদ্যোগে আজ রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মাহমুদুর রহমান মান্না এই হুঁশিয়ারি দেন।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তাদের (আওয়ামী লীগ) উদ্দেশ্য কি? তারা বলে কোন রকমে ৭ জানুয়ারি আসলে তো হয়… বিভিন্ন জায়গায় একটা বাক্স বসিয়ে বেড়াটেরা দিয়ে একটা ঘর দেখাব এবং তারপরে সন্ধ্যার পরে রায় ঘোষণা দেব। ওটা নির্বাচনই না, ঠেকাব কি?...ওই বেড়ার ঘরে আগুন লাগাবার কাজ আমরা করছি না। যেইভাবে চেষ্টা করুক, তারা এ নির্বাচন প্রহসনের বাইরে আর কিছু করতে পারবে না। আমরা বলছি, জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে এই নির্বাচন, বিশ্ববাসী প্রত্যাখ্যান করেছে এই নির্বাচন। তারপরেও ওই যে বললাম, আসতেছে শুভ দিন, দিনগুলো গুণতে থাকেন। দেখেন কি হয়? এ নির্বাচন সরকারের জন্যে, আওয়ামী লীগের জন্যে কোনো নির্বাচন নয়… এটা ওদের নির্বাসনে পাঠাবে… অপেক্ষা করেন।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আরও বলেন, সরকার না বলুক, টিভিতে বলছে, অবরোধ চলছে, দূরপাল্লার কোনো বাস চলছে না। দূরপাল্লার বাসগুলো কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে… যাত্রী পাচ্ছে না। এক মাস ধরে মানুষ বিরোধী দলের এই কর্মসূচির সাথে একাত্ম আছে, আরও থাকবে।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, চেষ্টা করেছিল না বিভিন্ন দল ভাঙতে, নতুন নতুন দল করতে। খেয়াল করে দেখেন পাকিস্তান আমলেও কিন্তু রাজাকার পাওয়া গেছে এবার তো রাজকারও পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এবারে রাজাকার-আলবদরও পায় না। নতুন নতুন কেন্টিডেট দেবে তাও পায় না। এই যে দেখেন জোনায়েদ সাকি (গণসংহতি আন্দোলন)… সব মিছিলে আপনারা দেখেন না। উনার দল রেজিস্ট্রেশনের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিল… নির্বাচন কমিশন দেয়নি। উনি আদালতে গেছেন … আদালত বলেছে দিয়ে দাও, আদালতের নির্দেশ নির্বাচন কমিশন তাদেরকে দেয়নি। কিন্তু বিএনএম-টিএনএম-এএনএম কত নামের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে না। ওরা বলছে, আমরা তিনশ আসনে প্রার্থী দেবো… প্রেসিডেন্টে-সেক্রেটারি বাইরে তিন নম্বর লোক নাই… ৩ই যদি না হয় ৩০০ কোত্থেকে হবে।
নাগরিক ঐক্যের সভাপতি আরও বলেন, এখন খালি আওয়ামী লীগ আছে আর কেউ নাই। এখন কি বলছেন, না আমরা এবার জোট করব না, এবার আওয়ামী লীগ একলা টিকিট দেব, আওয়ামী লীগ ইলেকশন করবে। নাম বললাম না…অনেক বড় নেতা ছিলেন, অনেক সম্মান করতাম, বাম আন্দোলন করতেন এখন দালালি করছেন। উনারা আগেই ঘোষণা করেছিলেন আমরা নৌকার টিকিট নিয়ে ইলেকশন করব। বলতে পারেন তারা কারা কারা। এখন তারা কী করবে? এখন তো নৌকা টিকিট দেবে না। এখন দলের মার্কা নিয়ে ইলেকশন করতে পারবেন? চামচাদের এই পরিণতি হয়, দালালদের এই অবস্থা হয়।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, একটা রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস মোকাবিলা করে, ত্রাসের রাজত্ব মোকাবিলা করে দেশব্যাপী অবরোধ চলছে। মাঝে-মধ্যে আমরা বিরতি দেই জনজীবনের কারণের জন্য, বাচ্চাদের পরীক্ষা চলছে.. মানুষ যেন স্বস্তির মধ্যে থাকে। কিন্তু চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য তৈরি হোন। মানুষ জেগে উঠছে, ধরে নিয়েছে এই সরকার থাকলে দুর্ভিক্ষ অনিবার্য। মানুষকে না খেয়ে মরতে হবে। সেই লড়াই গণতন্ত্র মঞ্চ ভোটের অধিকার রক্ষা করবে, মানুষকে রক্ষা করবে, দেশকে রক্ষা করবে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ভোট ছাড়া ক্ষমতায় আছে…, ক্ষমতা আখড়ে আছে। ১/১১ সরকারের রাস্তায় উনারা ধারণ করছেন। ১/১১ সরকার কি করেছিল? এই দল থেকে ওই দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনে কিংস পার্টি বানিয়েছিল… আর এখন শেখ হাসিনা গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এই দল থেকে ওই দল থেকে লোক ভাগিয়ে এনে কিংস পার্টি বানাচ্ছেন।
আজ রোববার বেলা ১২টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতৃবৃন্দ শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে বিজয়নগর ও তোপখানা রোডে বিক্ষোভ মিছিল করে। ‘একতরফা তফসিল মানি না, মানব না’, ‘ভোট চোর ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট চোর’ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মিছিল নিয়ে আসার পর অসুস্থ মাহমুদুর রহমানের সভাপতিত্বে সমাবেশ শুরু হয়। সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চলনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন।
গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা দল, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এলডিপি, গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি প্রভৃতি সংগঠন আলাদা আলাদাভাবে বিজয়নগর, তোপখানা রোড ও পান্থপথে মিছিল করে।
সরকারের পদত্যাগ ও একতরফা তফসিল বাতিলের দাবিতে বিএনপিসহ সমমনাজোটগুলো রোববার ভোর ৬ থেকে শুরু হওয়া টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শেষে হবে মঙ্গলবার ভোর ৬টায়। এটি বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ সমমনা জোটের সপ্তম অবরোধ কর্মসূচি।