রাজনীতিবিদদের বাঁচতে দিন, আদালতে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী
নাশকতার ৯ মামলায় নিজেকে গ্রেপ্তার দেখাতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের করা আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে এসব মামলায় তার জামিন আবেদনের ওপর শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার (১০ জানুয়ারি) দিন ধার্য করেন বিচারক। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুলতান সালাহউদ্দিন সোহাগের আদালত এ দিন ধার্য করেন। আদালতে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী বলেছেন, তিনি (মির্জা ফখরুল) অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক ব্যক্তি। রাজনীতিবিদদের বাঁচতে দিন। আইনে আছে, তাকে জামিন দেওয়া যায়, অন্য আসামিরা যেমন জামিন পাচ্ছে।
শুনানিতে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুসহ তিন হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। স্বাধীন দেশেও এমন বিএনপির হাজার হাজার মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। মির্জা ফখরুল ইসলামকে বহির্বিশ্ব ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে দেখে। অথচ তার নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন দেশে আমরা এমন কিছু প্রত্যাশা করি না।’
আইনজীবী আরও বলেন, ‘৯ মামলার প্রত্যেকটিতে বলা হয়েছে গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে মির্জা ফখরুল নাকি নাশকতার উসকানি দিয়েছে। সারা বিশ্ব জানে বিএনপি ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম যদি আপস করতেন তাহলে ৭৬ বছর বয়সে এখানে আসতে হতো না। গ্রেপ্তারের পর তার পাঁচ কেজি ওজন কমে গেছে। তাকে গ্রেপ্তারের উদ্দেশ একতরফা যেন ভোট করা যায়। তার হার্টের রোগ আছে। তার জামিন দেন। অতীতে তিনি জামিন নিয়ে শর্ত ভঙ্গ করেননি, এবারও করবেন না।’
আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী শুনানিতে বলেন, তিনি (ফখরুল) বাংলাদেশের একজন জাতীয় নেতা। তিনি সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। রাজনীতিবিদদের বাঁচতে দিন। অন্য আসামিরা যেমন জামিন পাচ্ছে। তিনি অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক ব্যক্তি। আইনে আছে তাদের জামিন দেওয়া যায়। তাকে জামিন দিন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ১০০টির মতো মামলা রয়েছে। তিনি নিয়মিত আদালতে আসেন মামলার হাজিরার জন্য। তাকে জামিন দিলে তিনি শর্ত মেনে হাজিরা দেবেন।
মির্জা ফখরুলের আইনজীবী আব্দুস সালাম হিমেল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ফখরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর মামলা গুলো হলো–পল্টন থানার ৫৪(১০)২৩, ৬০(১০)২৩, ২(১১) ২৩, ৪(১১)২৩, ৭(১১)২৩, ১৩(১১)২৩ ও রমনা থানার ২০(১০)২৩, ২৪(১০)২৩, ২৫(১০) ২৩।’ তিনি বলেন, ‘এসব মামলায় মির্জা ফখরুলকে এজাহারে আসামি করা হয়েছে। বেশিরভাগই তালিকার এক নম্বরে রাখা হয়েছে।’
এর আগে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে একটি গাড়িতে করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মির্জা ফখরুল ইসলামকে হাজির করা হয়। এ সময় তাকে আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মির্জা ফখরুলের পক্ষে জামিন আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক আসামির উপস্থিতিতে জামিন শুনানির জন্য ৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন। আজ সকালে মির্জা ফখরুলের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেজবাহ বলেছিলেন, ‘নাশকতার ৯ মামলায় মির্জা ফখরুলের পক্ষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে জামিন চেয়ে আবেদনের ওপর শুনানির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ওই সময় আদালত আবেদনটি গ্রহণ করেননি। এরপর আমরা উচ্চ আদালতে যাই। পরে আদালত আইন অনুযায়ী জামিন শুনানি গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপরে ৯ জানুয়ারি আবার নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন করি। আদালত মির্জা ফখরুলকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করে তার উপস্থিতিতে জামিন শুনানির জন্য আজকের তারিখ ঠিক করেন।’
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের সময় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে রমনা থানায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করে। ওই মামলায় মির্জা ফখরুলসহ ৫৯ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়। পরদিন ২৯ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গুলশানের বাসা থেকে মির্জা ফখরুলকে আটক করে ডিবি পুলিশ। দিনভর ডিবি কার্যালয়ে রাখার পর পুলিশের করা ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রাতে আদালতে নেওয়া হয়। আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। এরপর থেকে কারাগারে রয়েছেন মির্জা ফখরুল।