কেরানীগঞ্জে রাসেল হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ৯ আসামি রিমান্ডে
ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রাতভর পৈশাচিক নির্যাতন চালিয়ে রাসেল (৩২) নামে এক যুবককে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৯ আসামিকে তিনদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার (১৭ জানুয়ারি) ঢাকার জ্যেষ্ঠ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইসলাম এ আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আনোয়ারুল কবীর বাবুল বিষয়টি এনটিভি অনলাইনকে নিশ্চিত করে বলেন, ‘ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ৯ আসামিকে হাজির করে ১০ দিন করে রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।’
পিপি আরও বলেন, ‘এ মামলায় রিমান্ড পাওয়া আসামিরা হলেন—আফতাব ওরফে আফতাব উদ্দিন রাব্বী, মো. শিপন আহমদ, দেলোয়ার ওরফে দেলু, মো. রনি, অনিক হাসান হীরা, রাজীব আহমেদ, মো. ফিরোজ খান, মো. মাহফুজুর রহমান ও মো. রতন শেখ।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে কেরানীগঞ্জ সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ১১ জন আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এরমধ্যে ৯ জনকে আজ রিমান্ডে নিতে আবেদন করে পুলিশ। বাকি তিন আসামি আজ ঢাকার চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এদের মধ্যে ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আসামি সজীব এবং ঢাকার জুডিসিয়াল ম্যাজেস্ট্রেট মো. জুলহাস উদ্দিনের আদালতে আসামি আলমগীর ওরফে ঠান্ডু ও আমির হোসেন জবানবন্দি দেন।
নথি থেকে জানা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেলঘাট এলাকার পারভীন টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় আফতাব উদ্দীন রাব্বির নিজ অফিসে রাতভর নির্যাতন করে তার বন্ধু রাসেলকে। এ ঘটনায় রাসেল মারা যায়। ঘটনার দুই দিন পর নিহত রাসেলের বাবা তোফাজ্জল হাওলাদার বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামি ও আরও ১০ থেকে ১২ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলার পর আসামিরা পালিয়ে যায়।
পরে নিহতের স্ত্রী মৌসুমি আক্তার রিয়া গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার স্বামী রাসেলকে ঘাতক রাব্বিসহ তার সহযোগীরা রাতভর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়। স্বামীকে নির্যাতনের খবর পেয়ে আমি রাত সাড়ে ১২টায় তেলঘাট এলাকার পারভীন টাওয়ারের দ্বিতীয় তলায় আফতাব উদ্দীন রাব্বির নিজ অফিসে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি আমার স্বামী অফিসের ফ্লোরে পড়ে আছে। আমি তাদের জিজ্ঞাসা করলে তারা মারধরের কথা অস্বীকার করে। এরপর তারা বাড়িতে এসে আমার মেয়েকে একটি ঘরে আটক করে। পরে ঘরের সবকিছু তছনছ করে ভেঙে ফেলে। আমার কাছে ২০ লাখ টাকা দাবি করে। আমি এত টাকা কোথায় পাব বললে, তারা আমার স্বামীর টাকা-পয়সা, চেকবই ও পাসপোর্ট নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমার স্বামীর আইফোন ও আমার হাতের ফোনটিও নিয়ে যায়। যাতে করে আমি ৯৯৯ নম্বরে বা কোনো স্বজনকে ফোন দিতে না পারি। এরপর তারা ফের অফিসে গিয়ে আমার স্বামীকে মারধর করতে থাকে। সকালে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। সকালে আমার স্বামীকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।’
পরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি সোশ্যাল মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে আসামিরা পালিয়ে যায়। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার পুলিশ মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের পর পরিবারের কাছ হস্তান্তর করে।