তিন সন্তানকে বিষ খাইয়ে মায়ের আত্মহত্যার চেষ্টা, এক শিশুর মৃত্যু
‘আমি মারা গেলে আমার বাচ্চারা সকলের অযত্ন অবহেলায় বেঁচে থাকবে। কষ্টের শেষ থাকবে না। তাই আমার সঙ্গে তাদেরও নিয়ে যেতে চাই। এই দুনিয়া আমার কাছে এখন ভারী হয়ে উঠছে। আমি আর এই দুনিয়ায় থাকতে চাই না। আমার মেয়েদেরও রাখতে চাই না। এত জ্বালাতন আর সহ্য করতে পারি না। এতে আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কোনো দোষ নেই।’
গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আজ বুধবার দুপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এ কথাগুলো বলছিলেন পলি বেগম।
গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী নড়াইল জেলার লঙ্কারচর গ্রামে পারিবারিক কলহের জের ধরে তিন কন্যা সন্তানকে বিষ খাইয়ে নিজে বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন গৃহবধূ পলি বেগম। এ ঘটনায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেড় বছরের ছোট মেয়ে মীমের মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সকালে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মীম মারা যায়। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে ওই গৃহবধূ বিষ পান করেন এবং তার তিন কন্যা সন্তানকেও বিষ পান করান।
পলি বেগম গোপালগঞ্জের সীমান্তবর্তী নড়াইল জেলার লোহাগাড়া উপজেলার লঙ্কারচর গ্রামের টিটু মোল্লার স্ত্রী। মারাত্মক অসুস্থবস্থায় ৮ বছরের মেয়ে আফসানা ও আড়াই বছরের আমেনাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দশ বছর আগে লোহাগড়া উপজেলার লংকারচর গ্রামে হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে টিটু মোল্যার সাথে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার খাগড়াবাড়ি গ্রামের শরিফুল শেখের মেয়ের পলি বেগমের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে তিনটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন সময় পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া হলে শাশুড়ি সেকেলা বেগম পুত্রবধূ পলির বাবা শরিফুল শেখের একাধিক বিয়ে নিয়ে তার উপর মানসিক নির্যাতন চালিয়ে আসছিল।
মঙ্গলবার সকালে পলি তার শাশুড়ির উঠানে জ্বালানি (গাছের পাতা) শুকাতে দেয়। এ নিয়ে শাশুড়ি গালমন্দসহ পলির বাবার একাধিক বিয়ের (নয়টি বিয়ে) বিষয় নিয়ে নানান বাজে মন্তব্য করতে শুরু করেন। এতে মনোক্ষুণ্ন হয় পলি। এক পর্যায়ে বিকেলে বাড়িতে থাকা বিষ তিন কন্যা সন্তান মাদ্রাসায় পড়ুয়া ৮ বছরের মেয়ে আফসানা, আড়াই বছরের আমেনা ও দেড় বছরের মীমকে পান করিয়ে নিজে পান করেন। বিষয়টি টের পেয়ে পরিবারের লোকজন প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার সকালে দেড় বছরের ছোট মেয়ে মীমের মৃত্যু হয়।
পলি বেগম জানায়, তার স্বামী টিটো মোল্লা বাড়িতে থাকেন না। মেয়েদের নিয়ে তিনি গ্রামে থাকেন। পলি বেগমের শাশুড়ি পলি বেগমকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সব সময় নির্যাতন করেন।
এ বিষয়ে পলি বেগমের স্বামী টিটু মোল্লা বলেন, আমি ঢাকাতে স্কয়ার কোম্পানিতে চাকরি করি। স্ত্রী তিন মেয়েকে নিয়ে বাড়ি থাকে। তার মা সেকেলা বেগম প্রায়ই স্ত্রীকে নির্যাতন করতেন স্ত্রী তাকে ফোনে বলতেন। কাল (মঙ্গলবার) মা তাকে নানানভাবে নির্যাতন করেছেন বলে ফোনে জানায়। আমি ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশে দুপুরেই রওনা হই। পরে জানতে পারি আমার স্ত্রী তিন মেয়েকে বিষ খাইয়ে সে নিজেও খেয়েছে। ছোট মেয়ে মারা গেল। অন্য দুই মেয়ের কি হয় আল্লাহই জানে। আল্লাহ যেন আমার দুই মেয়েকে ও স্ত্রীকে সুস্থ করে দেন।
গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, গতকাল রাতে মা ও তিন মেয়ে শেখ সায়রা খাতুন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়। এরমধ্যে ছোট্ট মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। অন্য তিনজন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তবে নির্দিষ্ট সময় পার না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না তারা শঙ্কামুক্ত কিনা।
এ ব্যাপারে লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাঞ্চন কুমার রায় জানান, মৃত মীমের লাশটি বিকেলে তার বাড়িতে এসে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে এখনও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।