আনসার সদস্যকে হত্যা : ২২ বছর পর ফাঁসির আসামি গ্রেপ্তার
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার শ্যামলী এলাকায় দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় কর্তব্যরত আনসার সদস্যকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ ঘটনা ঘটে ২০০২ সালে। এ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি শুক্কুর আলী ওরফে সোহেলকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। গতকাল রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) তাকে সাভার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১০।
আজ সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, রাজধানী মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় ২০০২ সালের ১২ মার্চ ছিনতাইকারীদের গুলিতে কর্তব্যরত অবস্থায় আনসার সদস্য ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হয়। এ ঘটনায় এক পুলিশ সদস্যও গুরুতর আহত হন। পরবর্তীতে তাদের চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আনসার সদস্য ফজলুল হককে মৃত ঘোষণা করেন। এই ঘটনায় পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন বাদী হয়ে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় সন্ত্রাসী শুক্কুর আলী ওরফে সোহেলসহ তিনজনের নামে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলা রুজুর বিষয়টি জানতে পেরে আসামিরা আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর শুক্কুরসহ গ্রেপ্তার আসামিরা জামিনে মুক্ত হয়ে আবার আত্মগোপনে চলে যায়।
খন্দকার আল মঈন বলেন, মামলার তদন্ত শেষে ২০০৩ সালের ৩১ মার্চ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলার বিচার কাজ শেষে ২০১৯ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর তিন আসামিকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই মামলায় পুলিশ কনস্টেবল আবদুল জলিল ফরাজীকে হত্যাচেষ্টার দায়ে আসামি শুক্কুর আলী ওরফে সোহেলকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত।
খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, এই মামলায় দীর্ঘদিন পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় রোববার রাতে র্যাব-১০-এর একটি আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর সাভার এলাকায় অভিযান চালিয়ে শুক্কুর আলীকে গ্রেপ্তার করে।
খন্দকার আল মঈন বলেন, শুক্কুর আলী জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, হত্যাকাণ্ডের দিন দুপুরে শুক্কুর আলী তার অপর দুই সহযোগিদের নিয়ে ছিনতাইয়ের উদ্দেশে রাজধানী মোহাম্মদপুরের শ্যামলী এলাকায় একটি বাস কাউন্টারের সামনে অবস্থান করে। তারপর শুক্কুর আলী ও তার সহযোগীরা মিলে অজ্ঞাত এক ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। তখন ওই এলাকায় কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল আকমান হোসেন, কনস্টেবল আব্দুল জলিল ফরাজী ও আনসার সদস্য ফজলুল হক দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে ছিনতাইকারী শুক্কুর আলীসহ তিনজনকে আটকের চেষ্টা করে। এ সময় শুক্কুর আলী ও তার অপর সহযোগীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের কাছে থাকা রিভলভার দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে। এতে আনসার সদস্য ফজলুল হক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয় এবং একজন পুলিশ সদস্যকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে। অপর পুলিশ সদস্য আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি করলে শুক্কুর আলী ও তার অন্যান্য সহযোগিরা কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।
র্যাব মুখপাত্র বলেন, শুক্কুর আলী ১০ বছর বয়স থেকেই বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সে রাজধানীর মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, হত্যা, অপহরণ ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করতো বলে জানা যায়। তিনি আনসার সদস্য ফজলুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় সাড়ে তিন বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। শুক্কুর আলী চট্টগ্রামসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় গ্রেপ্তার এড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ছদ্মবেশ ধারণ ও নাম পরিবর্তন করে কিছুদিন পর পর অবস্থান পরিবর্তন করত।
খন্দকার আল মঈন বলেন, শুক্কুর আলী এর আগে মাদক সংক্রান্ত মামলায় প্রায় চার বছর, অস্ত্র সংক্রান্ত মামলায় প্রায় পাঁচ বছর ও অপহরণসহ বিভিন্ন মামলায় বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ করেছে বলে জানা যায়। তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, ডাকাতি ও মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫টির অধিক মামলা রয়েছে।