শেফ জুয়েল রানার দাফন সম্পন্ন, বাড়িতে শোকের মাতম
‘পোলাডায় আমারে থুইয়া আগেই চইল্যা গেল। অহন আমার কী অইবে’- পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে নিহত পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার গাজী মো. জুয়েল রানার মা ফাতেমা বেগম।
আজ শুক্রবার (১ মার্চ) আসরের নামাজের পর উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে জুয়েল রানার মরদেহ দাফন করা হয়।
নিহত জুয়েল রানার বাবার নাম মো. ইসমাইল গাজী। স্ত্রী রেবেকা সুলতানা, মেয়ে তাসমিম (৮), ছেলে তাইফুরকে (৩) নিয়ে ছিল তাঁর সংসার। পরিবার নিয়ে তিনি ঢাকায় থাতেন।
জুয়েল রানা বেইলি রোডে ওই ভবনে আগুন লাগার পর বাঁচতে জানালার কাচ ভেঙে নামতে গিয়ে নিহত হন। তিনি ওই ভবনটির সাত তলায় একটি রেস্তোরাঁয় বাবুর্চির (শেফ) কাজ করতেন।
পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চার-পাঁচ বছর ধরে জুয়েল রানা ওই রেস্তোরাঁয় কাজ করেন।
ওই রেস্তোরাঁতে তাঁর আপন ভাগনে রাকিব আকনও কাজ করতেন। মুঠোফোনে রাকিব আকন জানান, বহুতল ভবনটিতে আগুন লাগার পর তাঁরা তিনজন ছয়তলায় নেমে একটি জানালা ভেঙে নিচে নামার চেষ্টা করেন। প্রথমে রাকিব এবং পরে রেস্তোরাঁর আরেক কর্মচারী ডিসের তার বেয়ে নিচে নামেন। তাঁর মামা জুয়েল রানা জানালা দিয়ে বের হয়ে একটি এসির ওপর বসেন। এ সময় এসিসহ ভেঙে তিনি নিচে পড়ে যান। ভবনটির জানালার কয়েকটি কার্নিশের সাথে তাঁর মামার শরীর আঘাত লেগে লেগে নিচে পড়ে। এতে তাঁর মাথা ফেটে যায় এবং মেরুদণ্ড ভেঙে যায়। পরে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, এক মাস আগে জুয়েলের ছোট বোন হাফিজার বিয়ে হয়েছে। জুয়েল ছুটি না পাওয়ায় বোনের বিয়েতে বাড়িতে আসতে পারেননি। রোজার আগে তাঁর বাড়ি আসার কথা ছিল। এ সময় ছোট বোনকে তুলে দেওয়ারও কথা ছিল।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে গাজী মো. জুয়েল রানার মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। আজ শুক্রবার কলাপাড়া উপজেলার মিঠাগঞ্জ ইউনিয়নের পশ্চিম মধুখালী গ্রামে আসরের নামাজের পর জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর মরদেহ দাফন করা হয়। এমন মৃত্যুর খবরে পুরো এলাকায় শোকের ছাঁয়া নেমে এসেছে।
মিঠাগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের পশ্চিম মধুখালী এলাকার ইউপি সদস্য মো. কাওসার গাজী বলেন, ‘বাবা দিনমজুর। মানুষের বাড়ি-ঘরে কাজ করতেন। মূলত জুয়েলের আয় দিয়েই পরিবারটি চলত। কর্মক্ষম সন্তানকে হারিয়ে পুরো পরিবার শোকে কাতর হয়ে পড়েছে।’
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমরাও খোঁজ-খবর নিয়েছি। শুনেছি পরিবারটি অতি দরিদ্র। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ পরিবারকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।’
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে দগ্ধ হয়ে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া গুরুতর আহত হয়েছে অন্তত ২২ জন। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৭৫ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। ঘটনা তদন্তে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগুনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে উদ্ধারকাজে সহায়তা করে পুলিশ, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, এনএসআই, বিজিবি ও র্যাব।