মোংলা বন্দরের উন্নয়নে ১৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা। পদ্মা সেতু চালুর পর এই বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি বেড়েছে বহুগুণ। তবে বন্দরের ড্রাফট বা নদীর পানির গভীরতা মাত্র সাত মিটার হওয়ায় বড় জাহাজ ভিড়তে পারছে না। যার ফলে জাহাজ গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট লাইটার জাহাজ দিয়ে মালামাল পরিবহণ ও খালাস করতে হচ্ছে। এতে সময় ও ব্যয় দুইটিই বাড়ছে। তাই এমন পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরের ড্রাফট বাড়াতে চায় কর্তৃপক্ষ। এজন্য এক হাজার ৫৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এর আওতায় জেটির ড্রাফট বৃদ্ধি করে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১০ মিটার করা হবে। ফলে সহজেই বড় আকারের মাদার ভেসেল জাহাজ জেটিতে ভিড়তে পারবে। প্রকল্পের নাম ‘মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে সংরক্ষণ ড্রেজিং’।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো প্রস্তাবে দেখা গেছে, পারফরম্যান্স বেজড সংরক্ষণ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলের নাব্যতা সংরক্ষণ করা এবং পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ বছরে কম বেশি ৩৪৭ দশমিক ৫০ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা হবে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘ঢাকার সবচেয়ে নিকটতম বন্দর মোংলা। এজন্য পাঁচ বছর মেয়াদের একটি পরিকল্পনাও গ্রহণ করেছি। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা আধুনিক ড্রেজার কিনব। ফলে মোংলা বন্দরের আশপাশের ড্রাফট সাড়ে ৯ থেকে ১০ মিটার হবে।’
শাহীন রহমান আরও বলেন, ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের হারবার এলাকায় ৯ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ হ্যান্ডেলিং করার লক্ষ্যে ২০২০ সালে পশুর চ্যানেলের আউটার বারে ড্রেজিং করে কাঙ্ক্ষিত গভীরতা সৃষ্টি করা হয়। কিন্তু পলি জমার কারণে গভীরতা কমায় আউটার বারে হারবার চ্যানেলে ৯ দশমিক ৫মিটার গভীরতার জাহাজ চলাচল বিঘ্নিত হয়। এ এলাকায় অর্জিত গভীরতা ধরে রাখার জন্য রাজস্ব বাজেটে অনিয়মিতভাবে ড্রেজিং করা হচ্ছে। এ সমস্যার সমাধানে আউটার বারে নাব্যতা বজায় রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত সংরক্ষণ ড্রেজিং করা প্রয়োজন।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ ছাড়া বন্দরের জেটিতে ৯ দশমিক ৫ থেকে ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের জন্য ‘মোংলা বন্দর চ্যানেলের ইনার বারে ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পের অধীনে ইনার বারে ২৩ কিলোমিটার এলাকায় ৮ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফট অর্জনের লক্ষ্যে ২৩৭ দশমিক ৫৫ লাখ ঘনমিটারের ড্রেজিং চলমান। এ কাজ চলতি বছরের জুনের মধ্যে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত আছে। এ এলাকায়ই অর্জিত নাব্যতা ধরে রাখার জন্য সংরক্ষণ ড্রেজিং প্রয়োজন। এ প্রেক্ষাপটেই প্রকল্পটি প্রস্তাব করা হয়েছে।’
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ কে এম আনিসুর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে মোংলা বন্দরের চাপ অনেকাংশে বেড়ে গেছে। কিন্তু বন্দরের আশপাশে ড্রাফট মাত্র সাত মিটার। ফলে বড় জাহাজ ভিড়তে পারে না। এজন্য মোংলা ঘিরে আমরা মেগা উদ্যোগ নিয়েছি। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে প্রকল্পের আওতায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হবে পরামর্শক খাতে। এ ছাড়া দুই হাজার একর জমির ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫০ কোটি, ১০ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি বোট, ২৬৪ লাখ ঘনমিটার কাটার সাকশন ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৮৯৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। ৮৩ দশমিক ৫ লাখ ঘনমিটার ট্রেলিং সাকশন হুপার ড্রেজার দিয়ে ড্রেজিং খাতে ব্যয় হবে ৫১৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং ১৫ লাখ ঘনমিটার মাটির বেড়ি বাঁধ নির্মাণ খাতে ব্যয় হবে ২০ কোটি ৭০ লাখ টাকা।’