ঈদে ১৫০-১৬০ কোটি টাকার জামদানি বিক্রির আশা রূপগঞ্জের তাঁতী-ব্যবসায়ীদের
ঈদে ভালো বিক্রির আশায় নতুন ও রুচিশীল জামদানি শাড়ি তৈরিতে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার নোয়াপাড়া জামদানি পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তাঁতীরা।
সরেজমিনে জামদানি পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁতীরা হাতে সুতা কাটার কাজ করে যাচ্ছেন। শ্রমিকরা বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না। প্রতিদিন ভোর ৫টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই ব্যস্ততা। কখনো ঘড়ির কাঁটা রাত ১০টা থেকে রাত ১১টা এমনকি রাত ১২টাও ছাড়িয়ে যায়। ঈদুল ফিতর ঘনিয়ে আসায় প্রায় প্রতিদিনই চলছে এমন ব্যস্ততা।
জামদানির ব্যবসায়ী ও বিসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা করছেন, এবারের ঈদে অন্তত ১৫০ থেকে ১৬০ কোটি টাকার বিক্রি হবে।
বিসিক জামদানি শিল্পনগরীর আওতাধীন এলাকায় ৪০৭টি প্লটে ৪০৭ জন উদ্যোক্তা রয়েছেন। তাদের মোট ১ হাজার ৬৬৫টি তাঁত রয়েছে এবং এখানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মেশিন ছাড়াই তাদের সব কাজ করতে হয়।
জামদানি পল্লীতে ২০-২২ বছর ধরে শাড়ি বুননের কাজে নিয়োজিত মাইদুল ইসলাম বলেন, আসন্ন ঈদের কারণে কাজের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। কাজের চাপে বিশ্রামের সুযোগ নেই।
তাঁতী নাদিম বলেন, ‘আমি ১৭ বছর ধরে জামদানি শাড়ি বুনছি। আসন্ন ঈদ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও কাজ বেড়েছে। আমরা চাই কাজের পরিধি বাড়ুক। কাজ বাড়লে মালিক, বিনিয়োগকারী ও শ্রমিকদের জন্য ভালো হবে।’
জামদানি পল্লীর আরেক শ্রমিক শামীম বলেন, ‘আগে আমি সকাল ৯টায় কর্মস্থলে আসতাম। এখন আসতে হচ্ছে ভোর পাঁচটায়। আগে সন্ধ্যায় বাসায় যেতাম। এখন মাঝে মাঝে রাত ১০টা বা ১১টার মধ্যে বাসায় ফিরতে হয়। এখন কাজের চাপ বেড়েছে।’
জুনায়েদ জামদানি তাঁতের মালিক রুহুল আমিন বলেন, ‘ভারতীয় জামদানির কারণে আমাদের বাজার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। তারা মেশিনে জামদানি বুনছে। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তারা কম দামে বিক্রি করতে পারছেন। কিন্তু আমরা পারছি না। তারা একটি শাড়ি দুই হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। কিন্তু জামদানি শাড়ি বুনতে দুই হাজার টাকার সুতা লাগে। আমরা পাঁচ হাজার টাকার নিচে শাড়ি বিক্রি করতে পারি না। আগে আমরা প্রতি মাসে ১০০টি শাড়ি বিক্রি করতাম, কিন্তু এখন ভারতীয় শাড়ির কারণে আমাদের বিক্রি অর্ধেকে নেমে এসেছে।’
জামদানির কারিগর পরিবারের সন্তান শাহ আলম বলেন, ‘এখন দেখছি অনলাইনে জামদানি বিক্রি হয়। কিন্তু জামদানি শাড়ির কথা অনেকেই জানেন না। ভারতের মেশিনে তৈরি শাড়ি বিক্রি হচ্ছে জামদানি নামে। আসলে ওগুলো জামদানি শাড়ি নয়। অরিজিনাল জামদানি শাড়ি কিনতে হলে বিসিক আসতে হবে। আমাদের জামদানি শাড়ি রপ্তানি হচ্ছে। ঈদকে টার্গেট করে আমরা নতুন শাড়ি বুনছি। এখন পল্লীতে এলে ভালো শাড়ি পাবেন।’
রূপগঞ্জ জামদানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটির কর্মকর্তা জহিরুল ইসলাম বলেন, এখানে সব ধরনের উদ্যোক্তা রয়েছেন। কেউ বেশি বিক্রি করে, কেউ কম। যাদের ১৫-২০টি তাঁত আছে তারা ঈদুল ফিতরে এক থেকে দেড় কোটি টাকার শাড়ি বিক্রি করবে বলে ধারণা করা যায়। আর যাদের তাঁত কম তারা একটু কম বিক্রি করবেন। জামদানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে এ বছর মোট ১৫০-১৬০ কোটি টাকা বিক্রির প্রত্যাশা করছি।’