জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর মানুষ বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে : গণপূর্তমন্ত্রী
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণের ফলে পৃথিবীর মানুষ বিপজ্জনক ও খারাপ পরিস্থিতিতে আছে।’
আজ বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের মেঘশিমুল এলাকায় ম্যাক্স গ্রুপের ম্যাক্সক্রিটের এএসি (কংক্রিট ব্লক) ফ্যাক্টরি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘কার্বন নিঃসরণ যত কম হয় ভবন নির্মাণের জন্য তত ভালো। বিশ্বাব্যাপী এই কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নিয়ে আসার জন্য শিল্পোন্নত দেশগুলো কাজ করছে। এমনিতে আমাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ খুব কম। পৃথিবীর বড় ও শিল্পোন্নত অনেক দেশ আছে তাদের কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ অনেক বেশি। আর তাদের কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত। আজকে সারা বিশ্বে জলবায়ুর যে পরিবর্তন দেখা দিচ্ছে, সেটিও তাদের কারণেই। এখানে আমাদের অবদান নেই বললেই চলে।’
মন্ত্রী আরও বলেন, সারা দুনিয়ার মানুষ একটা বিপজ্জনক পরিস্থিতে রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক যে দেশগুলো আছে তারমধ্যে আমরা একটি। আমাদের খারাপ কাজের দৃষ্টান্ত অনেক কম, কিন্তু ক্ষতিগ্রস্তের দিক দিয়ে আমরা অনেক বেশি। পৃথিবীর যতগুলো দূষিত শহর রয়েছে তারমধ্যে ঢাকা শহরও একটি।
গণপূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিবেশ দূষণের মূল কারণ হলো আমাদের নির্মাণের যে উপদান তা পরিবেশ বন্ধব নয়। কার্বন নিঃসরণের জন্য ভালো কোনো উপদান নেই। সারা দেশে যে পরিমাণ ইটের ভাটা রয়েছে এবং এসব ভাটার কালো ধোয়ার কারণে পরিবেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঢাকার শহরের আশপাশের ইটভাটাগুলো থেকে যে পরিমাণ কালো ধোয়া বের হয় তাতে তো ঢাকা শহর অন্ধকারে থাকার কথা। কিন্তু একটু হলেও ঢাকা শহর ভালো রয়েছে। কাজেই এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সারা বিশ্ব বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে। তারই একটা প্রতীকের পরিবর্তে ইটের পরিবর্তে কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করা।’
ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে পরিবেশবান্ধব নির্মাণ উপদান ব্যবহার করে কাজ শুরু করা হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমরা চাইব সরকারি সব উন্নয়ন কাজে পরিবেশ বান্ধব এএসি বা কংক্রিট ব্লক এবং ব্লক ইটের ব্যবহার হোক। শিল্পকারখানা করার মতো যাদের সামর্থ্য আছে, আপনারা পরিবেশবান্ধব নির্মাণ উপদান ব্যবহারের মাধ্যমে পণ্য উৎপাদনে এগিয়ে আসেন। কারণ পরিবেশবান্ধব পণ্য-সামগ্রী পারবে ইটের ব্যবহার কমাতে এবং এতে দূষণ থেকে পরিবেশ রক্ষ পাবে।’
ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল ইসলাম, হাউজিং অ্যান্ড বিলডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক আশরাফুল আলম, গণপূর্ত বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামিম আক্তার, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মনজুরুর রহমান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান এবং মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক রেহানা আকতার।
ম্যাক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার গোলাম মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কারখানায় প্রতি বছর তিন লাখ ৬৫ হাজার কিউবিক মিটার এএসি ব্লক তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। এই ব্লক পরিবেশবান্ধব, টেকসই এবং সাশ্রয়ী হবে। ইটভাটার সঙ্গে তুলনা করে তিনি বলেন, এই কারখানা থেকে কোনো কার্বন নিঃস্বরণ হয় না। পরিবেশ দুষণ করে না। সাধারণ ইটভাটার জন্য ফসলি জমির টপ সয়েল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এএসি ব্লক তৈরি জন্য মাটির প্রয়োজন হয় না। সিমেন্ট, বালু, জিপসাম, অ্যালুমিনিয়াম পাউডার এবং পানি দিয়ে এএসি তৈরি হয় বলে পরিবেশের ক্ষতি হয় না। এএসি ব্লক দিয়ে স্থাপনা নির্মাণে সাধারণ ইটের তুলনায় ২০ শতাংশ সাশ্রয় হয়।