গোপালগঞ্জে স্ত্রীকে মারার অভিযোগে গ্রামপুলিশ স্বামী গ্রেপ্তার
২০ মাস বয়সের ছোট্ট শিশু রাবেয়া বুঝতেই পারছে না তার মা নুরী বেগম প্রকাশ মুনিয়া আর কোনদিনই হাসপাতাল থেকে ফিরে আসবে না। বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের জন্য নুরী বেগম প্রকাশ মুনিয়াকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত স্বামী গ্রামপুলিশ আশিকুর রহমান শেখ। গতকাল শনিবার (১১ মে) গভীর রাতে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে নুরীকে মারপিট করে আশিকুর। পরে তাকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে স্বামী আশিক। খবর পেয়ে আজ রোববার (১২ মে) সকালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার হরিদাসপুর ইউনিয়নের মোচড়া গ্রামে আশিকুরের ঘর থেকে নুরীর পরিবারে সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে গোপালগঞ্জ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। আশিকের পরকীয়া প্রেম নিয়ে বিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ গৃহবধূ নুরী বেগমের পরিবারের। ঘটনার পর স্বামী আশিকুরকে আটক করেছে পুলিশ। রোববার বিকেলে ময়নাতদন্তের পর নুরীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
আশিকুর রহমান শেখ সদর উপজেলার হরিদাসপুর ইউনিয়নের মোচড়া গ্রামের শফিক শেখের ছেলে। তিনি গ্রাম পুলিশের চাকরি করেন। নিহত নুরী বেগম প্রকাশ মুনিয়া একই ইউনিয়নের খাগাইল গ্রামের নুরু মোল্লার মেয়ে।
খাগাইল গ্রামের নুরু মোল্লার স্ত্রী ও নিহত নুরীর মা রাফেজা বেগম বলেন, পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে মাঝে মধ্যেই বাড়ির বাইরে রাত কাটাতো আশিক। প্রতিবাদ করলে নুরীর উপর চালাত শারীরিক নির্যাতন। যখন যা চেয়েছে আশিককে তখন তাই দিয়েছি। মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছি, সোনার চেইন দিয়েছি, মেয়ের সুখের জন্য সাধ্যমতো টাকা দিয়েছি। কিন্তু আশিক সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে অন্য মেয়ের পিছনে খরচ করছে। আমার মেয়েকে মেরে ফেলেছে। আমি এর বিচার চাই। আশিকের ফাঁসি চাই।
নুরীর বাবা নুরু মোল্লা বলেন, ৪ বছর আগে পার্শ্ববর্তী মোচড়া গ্রামের শফিক শেখের ছেলে আশিকুরের সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দেই। মেয়ে কালো হওয়ায় জামাই যখন যা চেয়েছে তাই দিয়েছি। একটি মোটরসাইকেল কিনে দিয়েছিলাম। দুই বারে নগদ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছি। কিন্তু অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কের জন্য আমার মেয়েকে হত্যা করেছে আশিক। ২০ মাসের একটি বাচ্চা রয়েছে ওর ঘরে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।
নুরীর বোন আছিয়া বেগম বলেন, ২০ মাসের বাচ্চাটার কী হবে? আমার বোনকে এভাবে হত্যা করা হলো কেন? কী দোষ ছিল তার। এই দুধের বাচ্চার দায়িত্ব কে নেবে? আমার বোনের হত্যার বিচার চাই।
আশিকুরের ছোট বোন শৌখিন বলেন, সকালে এসে দেখি আমার ভাইর বউ টানটান হয়ে রয়েছে। ধরে দেখি হাতপা ঠান্ডা। এলাকার ওষুধের দোকান থেকে একজন এসে দেখছে, কিন্তু কিছু বলে নাই। পরে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে ডাক্তার বলে মারা গেছে। কিন্তু ভাই আর ভাইয়ের বউয়ের মধ্যে কি হয়েছে, আমরা জানি না। তারা তাদের ঘরেই থাকতো। তবে এর আগে কয়েকবার তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে, সেগুলো তার পরিবারের লোকজন নিয়ে আমরা বসে সমাধান করেছি। গতকাল রাতে কি হয়েছে আমরা পরিবারের কেউ জানি না।
গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আনিচুর রহমান বলেন, সকালে নুরী বেগমের ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারি যে তার বোনকে বোন জামাই শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। তার মরদেহ শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে আমরা পুলিশ পাঠিয়েছি সেখানে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। তাদের পরিবারের অভিযোগ, মেয়ের জামাই মেয়েকে হত্যা করেছে। তাদের এ অভিযোগের কারণে সকালেই প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নুরীর জামাই আশিকুরকে আটক করে নিয়ে আসা হয়। এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।