প্রাপ্তবয়স্ক চারজনের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন
বাংলাদেশে উচ্চরক্তচাপ ও উচ্চ রক্তচাপজনিত বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের প্রকোপ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতোমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিলেও দেশব্যাপী নিরবচ্ছিন্ন ওষুধ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিশ্ব উচ্চ রক্তচাপ দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বিএমএ ভবনে গবেষণা ও অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ পরিস্থিতি ও করণীয়’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমেই অসংক্রামক রোগজনিত অকালমৃত্যু অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। আসন্ন ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদানের পরামর্শ দেন তারা।
গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় সাংবাদিক সুকান্ত গুপ্ত অলকের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ, স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক ড. এনামুল হক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. মো. কাইয়ুম তালুকদার, এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পরিচালক ড. লায়লা আখতার, বিএসএমএমইউর কার্ডিওলজি বিভাগের ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজির অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কার্ডিওভাস্কুলার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সভাপতি ডা. এস এম মোস্তফা জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম, ব্র্যাক জেমস পি গ্রান্টস স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ডা. মলয় কান্তি মৃধা, পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ অফিসের ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার ডা. সৈয়দ মাহফুজুল হক, জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ওবায়দুল কবির এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জুবায়ের।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন প্রজ্ঞার সমন্বয়ক সাদিয়া গালিবা প্রভা। সভাপতিত্ব করেন জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মুহাম্মাদ রুহুল কুদ্দুস।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যানসার, কিডনি রোগ, শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি উচ্চ রক্তচাপ।
ডব্লিউএইচওর গ্লোবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন ২০২৩-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে ২ লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগজনিত অসুস্থতায় মারা গেছে, যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর ৭০ শতাংশের জন্য অসংক্রামক রোগ দায়ী হলেও এসব রোগ মোকাবিলায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মোট স্বাস্থ্য বাজেটের মাত্র ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই কমানো সম্ভব। সরকার ইতোমধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে ওষুধ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে এ খাতে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ড. মো. এনামুল হক বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ রক্তচাপ পরীক্ষা ও ওষুধে এক টাকা বিনিয়োগ করলে সামগ্রিকভাবে ১৮ টাকার সুফল পাওয়া যায়। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষভাবে তা ব্যবহার করা সম্ভব হলে উচ্চ রক্তচাপজনিত অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ারের (সিবিএইচসি) লাইন ডিরেক্টর ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে দেশের সব উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করছি। এই কর্মসূচি সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ ও অসংক্রামক রোগের প্রকোপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) উপমহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন বলেন, আমরা আশা করছি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সব কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।