ফাঁকা ঢাকায় আছে শঙ্কাও
দেশে পবিত্র ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৭ জুন। ঈদ উদযাপন করতে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ। ফলে, ঢাকা প্রায় ফাঁকা হয়ে উঠেছে। এখন ঢাকায় অবস্থান করছে তারা, যারা ঢাকার স্থানীয়। এ ছাড়া নানা কারণে যাদের গ্রামে ফেরার সুযোগ নেই, তারা।
ঈদ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি ও বেসরকারি ছুটি শুরু হয়েছে। ফলে, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে মূলত গ্রামে ফেরার তাড়া লক্ষ্য করা যায় মানুষের। সড়ক ও নৌপথে উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। গতকাল শুক্রবারও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে যানজট দেখা গেছে। কিন্তু, আজ শনিবার দুপুর থেকে রাজধানীর অধিকাংশ সড়কে কার্যত যানজট ছিল না বললেই চলে।
তবে, এ ফাঁকা ঢাকার পরিবেশ নিয়ে রয়েছে চুরি-ছিনতাইয়ের শঙ্কা। সাধারণত ঈদের সময় এলেই রাজধানীতে চুরি-ছিনতাই বেড়ে যায়। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ পর্যাপ্ত নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে। র্যাব-পুলিশ বলছে, যেহেতু শহরের অনেক বাসিন্দা ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে; সেহেতু রাজধানীর নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের।
রাজধানীর বাসিন্দারা গ্রামমুখী হওয়ায় নেই চিরচেনা যানজট। আগের মতো শহরের রাস্তায় রাস্তায় দীর্ঘসময় যানজটে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে না যাত্রীদের। অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে দায়িত্ব পালন করেছেন ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। আজ শনিবার (১৫ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমণ্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, শাহবাগ এবং কাকরাইল মোড় এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে।
রাজধানীর কাঁঠালবাগানের ফ্রি স্কুল স্ট্রিট রোডের একটি ছয়তলা ভবনের পাঁচতলায় পরিবারসহ থাকেন আব্বুল মোমেন। তিনি ঢাকাতেই ঈদ করবেন পরিবারের সঙ্গে। মোমেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি যে ভবনে থাকি, সে ভবনে আমার পরিবার ছাড়া আর কেউ নেই। সবাই গ্রামে চলে গেছেন। এ সময় কিছুটা নিরাপত্তাহীনতা কাজ করে। কারণ, প্রায় ঈদের সময় দেখা যায় চুরি-ডাকাতির মতো ঘটনা ঘটতে। আবার ঈদের আগের রাতে আমার বাসার দারোয়ানও গ্রামে চলে যাবেন। যাই হোক, ঈদ উদযাপন ভালো হোক সবার। কোনো ঝামেলা না হোক কোথাও।’
আজ শনিবার বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, প্রতিবছর রাজধানী থেকে এক কোটি মানুষ বিভিন্ন অঞ্চলে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে যায়। তাদের ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে পুলিশ সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ঢাকাকে নিরাপদ রাখতে সক্ষম হয়েছে। এবারও ঈদ উপলক্ষে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের যে নিজস্ব কার্যক্রম রয়েছে চেকপোস্ট, টহল। এই কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভবনের নিরাপত্তায় থাকা নিরাপত্তা কর্মীদের। তারা সমন্বয় করে আমাদের কাজ করবেন যাতে কোনো সমস্যা না হয়। বাসা-বাড়ি, দোকান, অফিস খালি রেখে সংশ্লিষ্টরা ঈদের ছুটিতে যাচ্ছেন। সুতরাং, সেগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্ব পুলিশের।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এসে শিকড় পরিবহণ নামের একটি বাস যাত্রীর অপেক্ষায় বেশকিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময় ওই পরিবহণের হেলপার সবুজ আহমেদ বলছিলেন, ‘আজ সকাল থেকে যাত্রী কমে গেছে অনেক। আমিও রাতে গ্রামে যাব ঈদ করতে।’
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের বাস স্ট্যান্ডে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেল কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। একে অপরের সঙ্গে বেশ ফুরফুরে মেজাজে গল্প করতে দেখা যায়। তাদের মধ্যে একজন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলছিলেন, ‘আজ একটু দাঁড়িয়ে-বসে থাকার সুযোগ পাচ্ছি। গাড়ি-ঘোড়ার চাপ কম।’