প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের অপেক্ষায় আছি : চীনের মন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর খুবই ফলপ্রসূ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশে সফররত চীনের কম্যুনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিভাগের মন্ত্রী লিউ জিয়ানচাও। আজ সোমবার (২৪ জুন) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের লিউ জিয়ানচাও বলেন, ‘আমি মনেকরি, প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর খুবই ফলপ্রসূ হতে যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরের জন্য তারা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন।
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করতে মন্ত্রী বর্তমানে বাংলাদেশ সফর করছেন। চার দিনের সরকারি সফরে শনিবার (২২ জুন) ঢাকায় পৌঁছেছেন তিনি।
চীনের এই মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে এবং আমি নিশ্চিত, আমাদের দুদেশের সরকার ও সরকারি সংস্থাগুলো আগামীতে আমাদের দুদেশের মধ্যে সহযোগিতার জন্য একটি সাধারণ পরিকল্পনা তৈরি করবে।’
জিয়ানচাও বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, সম্পর্কের ইতিহাস এবং বন্ধুত্ব নিয়ে তাদের মধ্যে অত্যন্ত গভীর ও বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এভাবে প্রায় পঞ্চাশ বছর পর এই বন্ধুত্ব পাকাপোক্ত হয়, যেহেতু আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।’
জিয়ানচাও আরও বলেন, বাংলাদেশের সমৃদ্ধি অভিযান, উদাহরণস্বরূপ ভিশন-২০৪১ এবং একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ ও দৃঢ় অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের অংশীদার চীন। আর চীন ও বাংলাদেশ অবকাঠামো, কৃষি, বিনিয়োগ, উৎপাদন ও বাণিজ্য খাতেও কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, ‘আপনাদের আধুনিকায়ন অভিযানে প্রতিবেশী ও অংশীদার হিসেবে চীন একটি ব্র্যান্ড হিসেবে রয়ে গেছে। তাই বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের কাঠামোর মধ্যেই আমরা এটা করব।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে বৈঠকে চীনের মন্ত্রী বলেন, তারা কিছু আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়েও আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বেশিরভাগ ইস্যুতে আমাদের একই রকম দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে এবং দুদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোগাযোগের সময় পারস্পরিক যোগাযোগ এবং প্রেক্ষাপটের ওপর জোর দেওয়া হয়।’
চীনের এই নেতা বলেন, তারা বিশ্বাস করেন যে, সরকারের নীতিগুলো প্রায়শই দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আসে। সুতরাং, আমরা বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ খুব প্রয়োজন। এটি মানুষকে একে অপরকে আরও ভালভাবে বুঝতে সহায়তা করছে এবং এটি সরকারকে একে অপরের কাছে প্রাসঙ্গিক এবং বর্তমান নীতি প্রণয়নে সহায়তা করছে। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটাই পারস্পরিক শিক্ষার প্রক্রিয়া।
সম্ভাব্য নথি সইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জিয়ানচাও বলেন, তারা আশা করছেন, অনেক ক্ষেত্রে চুক্তি হতে যাচ্ছে। আমরা চুক্তি সই করি এবং আপনারা জানেন, আমরা প্রতিশ্রুতি দিই এবং আমরা তা পূরণ করি।
এক প্রশ্নের জবাবে চীনের এই নেতা বলেন, তারা বাংলাদেশ সরকারের উদারতা ও মানবিক সহায়তার প্রশংসা করেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যু আরও জটিল হয়ে উঠছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে কাজ করে সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।
আগামীকাল মঙ্গলবার জিয়ানচাও চীনের এই নেতা রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তার এই সফরকে নিয়মিত উচ্চ পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় সফরের অংশ হিসেবে দেখা হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফর নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছিল।
জুলাইয়ের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যাশিত চীন সফরের বিষয়টি চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েনের সঙ্গে বৈঠকে গুরুত্বারোপ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে চীনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত ইয়াও বাংলাদেশের ‘রূপকল্প-২০৪১’ এবং ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময় সম্প্রসারণে এই সফরের তাৎপর্যের ওপর জোর দেন। শেখ হাসিনার আসন্ন সফর নিয়ে সম্প্রতি এক সেমিনারে এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত ইয়াও সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা হবে আরেকটি ঐতিহাসিক ঘটনা। এটি একটি গেম-চেঞ্জার হবে। এটি একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে।’ একজন সাংবাদিক আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সম্ভাব্য তারিখ জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত এ কথা বলেন।
সম্প্রতি ইয়াও বলেন, বাংলাদেশ ও চীনের উচিত সহযোগিতার জন্য তাদের কৌশলগত অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করা এবং নতুন প্রবৃদ্ধির বিষয় অনুসন্ধান করা।