বদলে গেছে নেত্রকোনার মদন উপজেলা চত্বরের দৃশ্য
ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়—বিষয়টি প্রমাণ করেছেন নেত্রকোনার মদন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আলম মিয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় উপজেলা পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় বদলে গেছে মদন উপজেলা পরিষদ চত্বরের দৃশ্য। নান্দনিক রূপে সজ্জিত হয়েছে এই উপজেলা পরিষদ চত্বর।
উপজেলার পুরাতন ভবন অপসারণ, মাটি ভরাট, নতুন করে রাস্তা নির্মাণ ও গাছে গাছে আল্পনা একে সজ্জিত করায় পরিষদ চত্বর এখন মিনি পার্কের রূপ নিয়েছে। এতে সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে স্থানটি ক্রমেই আকর্ষণীয় হয়ে উঠছে। বিকেল হতেই সেখানে ভিড় করছে শিশু-বৃদ্ধসহ সব শ্রেণির মানুষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৩ সালে মদন থানাকে উপজেলায় উন্নীত করা হয়। আটটি ইউনিয়ন নিয়ে চলছে মদন উপজেলার কার্যক্রম। ২০০১ সালের ১১ জুলাই মদন থানা সদরকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার অভাব এবং অবকাঠামো দিক থেকে পিছিয়ে থাকায় মদন উপজেলা পরিষদ চত্বরের অবস্থা ছিল খুবই নাজুক। সরকারি প্রতিটি অফিসের কার্যক্রম পরিচালিত হতো ভিন্ন ভিন্ন জরাজীর্ণ ভবনে। কোনো রকমে চলছিল জনগণের মধ্যে সরকারি সেবা প্রদান কার্যক্রম।
সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২২ সালে ৫ তলাবিশিষ্ট একটি নতুন প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয়। এতে কিছুটা পরিবর্তন আসে। কিন্তু নতুন ভবনের সামনে পুরাতন ভাঙা ঘর, পাবলিক হল মাঠ, স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে একাধিক গর্ত এবং রাস্তা থেকে দুই তিন ফুট নিচু থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই কাদাপানি জমে নানা সমস্যার সৃষ্টি হতো।
সার্বিক বিবেচনায় এসব সমস্যা সমাধানসহ উপজেলা পরিষদ চত্বরের সৌন্দর্য বর্ধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন বর্তমান ইউএনও মো. শাহ আলম মিয়া। পরিষদ চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও নান্দনিক রূপ দিতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করে উপজেলা পরিষদ চত্বর, পুরাতন উপজেলা পরিষদ চত্বর, স্টাফ কোয়ার্টারের সামনের ছোট পুকুর, প্রাথমিক শিক্ষা অফিস, নির্বাচন অফিসের সামনে এবং পাবলিক হল মাঠে মাটি ভরাটের জন্য আট লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে কাজ বাস্তবায়ন শেষে বদলে যায় উপজেলা পরিষদের দৃশ্যপট।
এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণের জন্য ১০ লাখ টাকা এবং সামনে গাছে গাছে আল্পনা আঁকতে ও রি-জিনিয়াস কিন্ডার গার্টেন স্কুল মেরামত করার জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। ইতোমধ্যে পরিষদ চত্বরে মাটি ভরাট ও গাছে আল্পনা আঁকার কাজ সম্পন্ন হওয়ায় নান্দনিক সাজে সজ্জিত হয় উপজেলা চত্বর।
পরিষদ চত্বরে অভ্যন্তরীণ রাস্তার নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। দীর্ঘদিনের জরাজীর্ণ মুক্তমঞ্চে লেগেছে সংস্কারের ছোঁয়া। পরিষদের বাউন্ডারি দেওয়াল হয়েছে নতুন রঙে রাঙানো। পরিষদের গাছগুলো পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যায় পাখির কলকাকলি এবং মানুষের কোলাহল সেখানে অন্যরকম পরিবেশ সৃষ্টি করে। পরিষদ চত্বর নবরূপে সজ্জিত হওয়ায় স্থানটি সব শ্রেণি-পেশার মানুষের কাছে হয়ে উঠেছে খুবই আকর্ষণীয়। এক কথায় বলতে গেলে পরিষদ চত্বর এখন একটি মিনি পার্ক হিসেবে রূপ নিয়েছে। শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ, বনিতারা এখানে এসে ছবি তুলছে এবং পুকুরপাড়ে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছে।
উপজেলা পরিষদে সেবা নিতে আসা মোতাহার হোসেন, শহিদুল ইসলাম শফিকসহ অনেকেই জানান, দীর্ঘদিন ধরে মদন উপজেলা পরিষদ চত্বরের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। বর্ষা এলে তো পানি জমে থাকায় অফিসে যাওয়াটা কষ্ট হতো। এখন মাটি ভরাটসহ উন্নয়নমূলক কাজ করায় পরিষদ চত্বর খুবই সুন্দর হয়ে উঠেছে। সেবা গ্রহীতারা সুন্দর পরিবেশে সেবা গ্রহণ করছে।
মদন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের সমন্বয় সভায় পরিষদ চত্বর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য একাধিক প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির মাধ্যমে মাটি ভরাট, নতুন রাস্তা নির্মাণ ও গাছে গাছে আল্পনা আঁকার কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।’
মদন উপজেলা প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া পিয়াল জানান, ‘পরিষদের চত্বর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য সমন্বয় সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নানা প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ঠিকাদারের মাধ্যমে গাছগুলোতে আল্পনা আঁকা, উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক পরিচালিত রি-জিনিয়াস কিন্ডার গার্টেন স্কুল মেয়ামত ও রংকরণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। বর্তমানে পরিষদ চত্বরের রাস্তা নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
মদন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল হান্নান তালুকদার শামীম জানান, বর্তমান ইউএনও একজন মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তা। তাঁর চিন্তা ও পরিকল্পনায় উপজেলা পরিষদ চত্বরটি এখন নান্দনিক উপজেলা পরিষদ হিসেবে রূপ নিয়েছে। এটি প্রশংসার দাবি রাখে এবং মদনে উদাহারণ হয়ে থাকবে।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. শাহ্ আলম মিয়া বলেন, ‘উপজেলায় যোগদানের পর পরিষদের বেহাল অবস্থা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ করি। বিধি মোতাবেক উপজেলা প্রকৌশলী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা কাজগুলো বাস্তবায়ন করেন। আমি প্রকল্পগুলোর সঠিক বাস্তবায়ন তদারকির জন্য কমিটি করে দেই এবং কাজ শেষে তাঁরা সন্তোষজনক প্রতিবেদন দাখিল করলে বিল প্রদান করা হয়। বর্তমানে উপজেলা পরিষদ চত্বরটি মানুষের চোখে পড়ার মতো হয়েছে। অনেকেই প্রতিনিয়ত এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসে।’