ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিলে ছাত্রলীগের হামলায় এক শিক্ষক, তিন সাংবাদিক গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহতের ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস।
আজ মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকেই বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গিয়ে মিশে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পথে।
সাভারে বিভিন্ন স্কুল এবং কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে মিছিল নিয়ে যোগ দেয় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান করে অবরোধ গড়ে তোলে তারা। তারা দাবি করে শিক্ষার্থীদের উপর শিক্ষার্থীদের নারকীয় হামলার বিচার।
শিক্ষার্থীদের অবরোধের মুখে মহাসড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। সড়কের দুই পাশে যানবাহন আটকে পড়ায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে অসংখ্য মানুষ।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের সহযোগিতায় ছাত্রলীগের হামলার জেরে গুলিবিদ্ধ বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের সভাপতি ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক খন্দকার লুৎফুল এলাহীসহ আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ অপর দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হচ্ছেন, দৈনিক বাংলার জাবি প্রতিনিধি আব্দুর রহমান সারজিল ও বণিক বার্তার মেহেদী মামুন।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নূরুল আলমের সভাপতিত্বে জরুরি সিন্ডিকেটের বৈঠকে বসেন সদস্যরা।
রবীন্দ্রনাথ হলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, উপাচার্যের বাসভবনে হামলা ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানো হয় বৈঠকে।
এ ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয় ছয় সদস্যের কমিটি।
এ ছাড়া চলমান সংকটে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ না রাখার ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পাশাপাশি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে ভোর থেকেই ক্যাম্পাসে মোতায়ন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। উপাচার্যের বাসভবন ঘিরে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে পুলিশের এপিসিকে।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের উপরে দফায় দফায় ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় ফুঁসে ওঠে শিক্ষার্থীরা।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগের হামলার শিকার হয়ে আন্দোলনকারীরা উপাচার্যর বাসভবনে আশ্রয় নিলে সেখানেও চলে নারকীয় তাণ্ডব।
হামলার শিকার হয় উপাচার্যের দুটি সরকারি গাড়িসহ তিনটি যানবাহন। পরে সড়কের পাশে থাকা বৈদ্যুতিক খুঁটি তুলে সড়কে রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালে ছাত্রলীগ, আন্দোলনকারী ও পুলিশের ত্রিমুখী সংঘর্ষে ক্যাম্পাস হয়ে ওঠে রণক্ষেত্র।
অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেওয়া হয় একটি মোটরসাইকেল।
এ সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে একজন শিক্ষকসহ গুলিবিদ্ধ হন চারজন।
গুলিবিদ্ধসহ গুরুতর আহতদের সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে গত রাতের নারকীয় হামলার প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আড়াইশো পুলিশ ক্যাম্পাসের মোতায়েন করা হয়েছে।
যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে।