ফেসবুক থেকে উধাও সারজিস ও হাসনাতের প্রোফাইল
ডিবি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর কোটা সংস্কার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন সমন্বয়ক সারজিস আলম। আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) বিকেলে পোস্ট করার এক ঘণ্টার মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় সেটি। ততক্ষণে ৫৯ হাজার লাইক, ১০ হাজার শেয়ার ও চার হাজার ২০০ মন্তব্য পড়ে পোস্টটিতে। তবে, রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুকে সারজিস আলমের ওই পোস্টটি আর পাওয়া যায়নি। এমনকি তার প্রোফাইলটিও পাওয়া যাচ্ছে না। একই অবস্থা আরেক সমন্বয়ক হাসনাত মাহমুদের। তিনিও তার আইডি থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সারজিস আলম ও হাসনাত মাহমুদ নিজেরাই প্রোফাইল ডিঅ্যাক্টিভেট করেছেন নাকি প্রোফাইল ডিজেবল হয়ে গেছে সেবিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি এখনও।
এর আগে, সারজিস আলম তার ফেসবুস পোস্টে বলেন, “কথা দিয়েছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করবেন না, মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আপনারা কথা রাখেননি। আপনারা আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর আঘাত করেছেন। সারা দেশে আমার স্কুল কলেজের ভাইবোনদের ওপর লাঠিচার্জ করেছেন। যাকে ইচ্ছা তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। আন্দোলনকারীকে খুঁজে না পেলে বাসা থেকে ভাইকে তুলে নিয়েছেন, বাবাকে হুমকি দিয়েছেন। মাশরুর তার উদাহরণ।
যারা একটিবারের জন্যও এই আন্দোলনে এসেছে তারা শান্তিতে ঘুমাতে পারে না, গ্রেফতারের ভয়ে থাকে৷ এমন অনেকে আছে যাদের পরিবার এখনো তাদের খোঁজ পায়নি। এমন তো হওয়া উচিৎ ছিল না!
কোথায় মহাখালীর সেতু ভবন আর কোথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়! অথচ আপনারা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে মহাখালীর সেতুভবনে হামলার জন্য গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলেন। সাথে আছে আসিফ মাহতাব স্যার, মাশরুর সহ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী অসংখ্য শিক্ষার্থী।
রিক্সা থেকে নামিয়ে প্রিজন ভ্যানে তুলছেন, বাসা থেকে তুলে নিয়ে মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন৷ আমার বোনদের রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছেন৷ কি ভাবছেন? এভাবেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?
৬ দিনের ডিবি হেফাজত দিয়ে ৬ জনকে আটকে রাখা যায় কিন্তু এই বাংলাদেশের পুরো তরুণ প্রজন্মকে কিভাবে আটকে রাখবেন? দুর্নীতি, লুটপাট, অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার করে যে ক্ষোভ সৃষ্টি করেছেন প্রতিনিয়ত সেগুলো কীভাবে নিবৃত করবেন?
পুলিশ ভাইদের উদ্দেশ্যে একটা বলি। এ দেশের মানুষের ক্ষোভ আপনাদের উপর নয়, পুলিশের উপর নয়৷ এই ক্ষোভ আপনার গায়ের ওই পোশাকটার উপর৷ যে পোশাকটাকে ইউজ করে বছরের পর বছর আপনাদের দিয়ে এ দেশের অসংখ্য মানুষকে দমন-পীড়ন করা হয়েছে, অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে, জেল আর আদালতের প্রাঙ্গণে চক্কর কাটানো হয়েছে, সেই পোশাকটার উপর৷ ওই পোশাকটা ছেড়ে আসুন আমাদের সাথে, বুকে টেনে নিব।
এ পথ যেহেতু সত্যের পথ, ন্যায়ের পথ, তাই যেকোনো কিছু মোকাবেলা করতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই৷ যতদিন না এ বাংলাদেশ আন্দোলনকারীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠছে; গণগ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে ; ততদিন এ লড়াই চলবে।”
আজ বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকার মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয় থেকে বাসায় যাওয়ার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এই ঘোষণা দেন তারা। পরবর্তীতে তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আর দেখা যায়নি। এ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছেন নেটিজেনরা। এর আগে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের সঙ্গে ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার, সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ ও নুসরাত তাবাসসুম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীরা সবাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।