পালান না বলেও পালিয়ে গেলেন শেখ হাসিনা
তখনও তিনি প্রধানমন্ত্রী। ২১ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকায় জনপ্রিয়তায় শীর্ষে আছেন বলে দাবিও করতেন। কয়েকদিন আগেও বলেছিলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালায় না, পালাতে জানে না।’ অথচ, আজ দুপুরে পালিয়ে যান শেখ মুজিবুরকন্যা শেখ হাসিনা। জানাননি নিজ দলের শীর্ষ নেতাদেরও—এমনটা অনেকের দাবি। এতে হতবাক আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
এর আগে গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এমন খবরে নির্বাহী আদেশে শেখ হাসিনা দেশব্যাপী অনিদৃষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করেন। এরপর আজ সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে দেশ থেকে পালিয়ে যান। এ সময় তিনি তার ছোট বোন শেখ রেহানাকেও সঙ্গে নিয়ে যান। তার আগে পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন।
চীন সফর শেষে গত ১৪ আগস্ট সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘অনেকেই বলেছে প্রধানমন্ত্রী পালিয়েছে, শেখ হাসিনা পালায় না।’ এরপর গত ১ আগস্টও (মঙ্গলবার) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষক লীগ আয়োজিত রক্তদান কর্মসূচি, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে না যাওয়ার অঙ্গীকার করে এসব কথা বলেন।
এর আগে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শেখ হাসিনাকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, ‘তীব্র গণজোয়ার শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না’—বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগ কখনো পালায় না, পালিয়ে যায়নিও কখনও।’ তবে, সেই কথা, সেই আশ্বাস আজ মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় হতবাক আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতারা।
নির্বাচন বিশ্লেষক ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তা এম সাখাওয়াত হোসেন একটি গণমাধ্যমে লিখেছেন, ‘দেশে আজকে যা ঘটল, এটাই হওয়ার কথা ছিল। গণ-অভ্যুত্থান কখনো ঠেকানো যায় না। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন সহজেই সমাধান করা যেত। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জেদের কারণে এত মানুষ মারা গেল। গণমাধ্যমে প্রাণহানীর যে চিত্র উঠে এসেছে, বাস্তবে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশি। আরও কত মরদেহ কোথায় পড়ে আছে, কত গণকবর হয়েছে, কতগুলো নিরীহ মানুষের প্রাণ ঝরেছে! তিনি তো চলে গেলেন। এখন এর জবাব দেবে কে?’