কক্সবাজারে মগনামা নৌঘাটে যাত্রী হয়রানি, ইজারা বাতিলের দাবি স্থানীয়দের
কক্সবাজারের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় মগনামা নৌঘাটে সীমাহীন হয়রানিসহ সাধারণ মানুষকে নাজেহালের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকার মানুষ। এ ঘাট মানুষ চলাচলের জেটি হলেও ইজারাদাররা মাছ অবতরণ কেন্দ্রে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ স্তানীয়দের।
অধিক বোট-ভাড়া, রাত ৯টার পর বেশি ভাড়া দিয়ে চ্যানেল পারাপার, বোটে বেশি মানুষ ঝুঁকি নিয়ে পারাপারের ঘটনায় অসন্তোষ বেড়ে চলেছে।
কুতুবদিয়া উপজেলার ভুক্তভোগী লোকজনের দাবি, প্রতিদিন রাতে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করেছে ইজারাদারের লোকজন। রাত ৯টার পর নির্দিষ্ট ভাড়ার বেশি দিয়ে পারাপার হতে বাধ্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের।
সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ঘাটের ইজারা বাতিলের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও করার পর বোট ভাড়া কমানোর সিদ্ধান্ত মানছেন না ইজারাদাররা। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে নিয়মিত নানা ঘটনার জম্ম দিচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয় লোকজনের। বঙ্গোপসাগরের চ্যানেলের কুতুবদিয়া মগনামাঘাট-বড়কোপঘাট, মগনামা-দরবারঘাটে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ নৌপারাপার হয়। তিন কিলোমিটার দীর্ঘ এ নৌপথে স্পিডবোট ও ডেনিস বোটে লোকজন পারাপার করা হয়।
ঘাট ইজারাদার নুরুল ইসলাম গং দীর্ঘদিন ধরে ঘাট পরিচালনা করার কারণে নৈরাজ্যকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। সাধারণ মানুষ দীর্ঘ সময় আটকে থাকা, নৌ পারাপারে ডেনিস বোট যোগে ৩০-৪০ জন বসতে পারলেও এসব বোটে বহন করছে ৮০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত। মানুষের সঙ্গে নানা পণ্যবোঝাই করে বোট চালানোর কারণে নিয়মিত ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে নৌ চ্যানেলটি। এসব বোটে জনপ্রতি ভাড়া আদায় করছে ৪০ টাকা। আর স্পিডবোটে নেওয়া হয় জনপ্রতি ১২০ টাকা।
স্থানীয় অধিবাসী মো. ইমন জানান, মগনামাঘাট-বড়কোপঘাট, মগনামা-দরবারঘাট ইজারাদারদের নৈরাজ্য সাধারণ মানুষকে অতিষ্ট করে তুলছে। ঝুঁকি নিয়ে যেমন সমুদ্র পাড়ি দিতে হয়, তেমনি বোটে বেশি ভাড়া আদায় করা হয় বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। রাত ৯টার পর যে কাউকে নৌ পারাপারের জন্য গুনতে হয় এক হাজার টাকা। যা মরার ওপর খাড়ার ঘা। এ ছাড়া মরদেহ ও রোগী পরিবহণে নানা সময়ে বাধা দেয় ঘাট শ্রমিকরা।
স্থনীয় রমজান আলী জানান, তিন কিলোমিটারের নৌ চ্যানেল কুতুবদিয়া যাওয়ার একমাত্র যোগাযোগ পথ। কিন্তু স্পিডবোটে ৮ থেকে ১০ মিনিটের পথ ১২০ টাকা আদায় করে ইজারাদার ইসলাম গং। আর ডেনিস বোটে প্রতি যাত্রীর থেকে আদায় করছে ৪০ টাকা। এসব বোটে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করায় ঝুঁকি নিয়ে চলাফেরা করতে হয়।
মো. রাজিব নামে একজন বলেন, সাধারণ মানুষের ঘাট পারাপারে স্বচ্ছতা আনা জরুরি। ইজারাদারের চুক্তি বাতিল করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ঘাটে নতুন ইজারাদার নিয়োগ দাবি করেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার বিভাগীয় সহ সমন্বয়ক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত রোববার আন্দোলনের পর ইজারাদারের লোকজন ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হয়েছে। এ ঘটনায় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কর্মসূচির পাশাপাশি হয়রানি বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
সম্প্রতি মগনামা-বড়কোপঘাট, মগনামা-দরবারঘাটের এসব নৈরাজ্য বন্ধ করতে কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। এ সময় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা ও ইজারাদারদের সঙ্গে সভা করেন। সভায় আগামী ১০ দিনের জন্য এসব ঘাটে স্পিডবোটে ১২০ টাকার পরিবর্তে ৮০ টাকা, ডেনিস বোটে ৪০ টাকার স্থলে ৩০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর নতুন করে ভোগান্তি বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঘাট ইজারাদার নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা ভাড়া আদায় করছি।’