রাজশাহীতে শেখ হাসিনাসহ ১৮১ জনের নামে হত্যা মামলা
রাজশাহীর পুঠিয়ায় মজির উদ্দিন হত্যার ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১৮১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তার স্ত্রী মাছুফা। গতকাল বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে পুঠিয়া থানায় দায়ের করা এ মামলায় অজ্ঞাত আরও ২৫০ থেকে ২৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তার পিতা মো. সামসুদ্দিন, সাবেক স্থানীয় সরকার ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারা, রাজশাহী-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক, চারঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, চারঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম, পুঠিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সামাদ ও জিএম হীরা বাচ্চুসহ ১৭৮ জনের নাম।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ৩টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বর বাজারে রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কের বানেশ্বর মসজিদ মার্কেটের সামনে পেঁয়াজহাটায় ২০ দলীয় রাজনৈতিক জোট সংবিধান ও গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করছিল। রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদের নেতৃত্বে লক্ষাধিক মানুষ অংশ নেয়। এ সময় শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রীদের নির্দেশে আসামিরা বিদেশি পিস্তল, দেশি আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো বড় হাসুয়া, ধারালো রামদা, ধারালো ডেগার, চাইনিজ কুড়াল, হবিস্টিক, ধারালো ফালা, হাতুড়ি, লোহার রড, জিআই পাইপ, বাঁশের লাঠি, কাঠের রোলার, হাত বোমা, পেট্রল বোমা, ককটেল ও অন্যান্য বিস্ফোরকদ্রব্যে সজ্জিত হয়ে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রবেশ করে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, শেখ হাসিনা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে মোবাইলফোনে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আবু সাঈদ চাঁদকে গুলি করে হত্যার হুকুম দেন। ওবায়দুল কাদের মোবাইলফোনে সাবেক সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ দারাকে এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মোবাইলফোনে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমকে ২০ দলীয় জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসা জনতাকে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ছত্রভঙ্গ করার পাশাপাশি গুলি করে হত্যার হুকুম দেন। এ ধরনের হুকুম পেয়েই অন্যান্য আসামিদের কয়েকজন তাদের হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি করতে থাকে। প্রাণ বাঁচাতে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আসা জনতা ছোটাছুটি করতে থাকে। এ সময় মামলার বাদী মাছুফার স্বামী মজির উদ্দিন পেঁয়াজহাটায় অবস্থান করছিলেন। সেসময় সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম হাতে থাকা বিদেশি পিস্তল দিয়ে গুলি করলে তা মজির উদ্দিনের থুতনির নিচে লেগে কানের পেছন দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে মজির উদ্দিন লুটিয়ে পড়লে মামলার অন্যান্য আসামিরা তাদের হাতে থাকা বিভিন্ন অস্ত্র দিয়ে মারপিট ও পদদলিত করে মজির উদ্দিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়, মজির উদ্দিনের নিহত হবার পর পুঠিয়া ও চারঘাট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও পুলিশি অস্ত্র ব্যবহার করে আসামিদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
মামলা করতে বিলম্ব হওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ওই সময় পুঠিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ না করে ফিরিয়ে দেয়। বর্তমানে দেশে ন্যায়বিচার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় মামলা করার কথা জানান নিহত মজির উদ্দিনের পরিবার।
পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কবির হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।