মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধের শঙ্কা
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ঋণনির্ভর যে কয়টি মেগাপ্রকল্প করা হয়, তারমধ্যে অন্যতম মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র। কয়েক দফায় ব্যয় বেড়ে বর্তমানে ৫৬ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়ানো এই প্রকল্প সরকার পতনের সঙ্গে সঙ্গে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
বর্তমানে ১২০০ মেগাওয়াটের দুটি কেন্দ্র পূর্ণাঙ্গভাবে উৎপাদনে থাকলেও শিগগিরই বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে নিরাপত্তা ঝুঁকিও বেড়েছে প্রকল্পটিতে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের দুটি কেন্দ্র ২০২৩ সালের জুলাই ও ডিসেম্বরে দুই দফায় চালু হয়। কেন্দ্রগুলো কমিশনিং করার জন্য জাপানের সুমিতমো করপোরেশনের মাধ্যমে আনা হয় ২২ লাখ ৫ হাজার টন কয়লা। চুক্তি অনুযায়ী, সুমিতমো করপোরেশন কয়লার সর্বশেষ সরবরাহ দেয় আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে। তাদের সরবরাহ করা কয়লা থেকে আর অবশিষ্ট রয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, যা দিয়ে উৎপাদন চালু রাখা যাবে আর মাত্র এক-দেড় মাসের মতো।
নিয়ম অনুযায়ী, সুমিতমোর সরবরাহ করা কয়লা শেষ হওয়ার আগেই কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে কয়লা কেনার কথা থাকলেও শীর্ষ কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কারণে কয়লা কেনা আটকে গেছে। আদালত পর্যন্ত গড়ানো বিষয়টি বর্তমানে রায়ের অপেক্ষায় রয়েছে আপিল বিভাগে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তিন বছরের কয়লা সরবরাহের জন্য কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ মেঘনা গ্রুপের ইউনিক সিমেন্ট কনসোর্টিয়ামকে বেআইনি সুবিধা দিতে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়ায় ১০ মাস দেরি করে। শেষ পর্যন্ত অনিয়মের অভিযোগ তুলে কনসোর্টিয়াম অব বসুন্ধরা, ইকুইন্টিয়া ও অথ্রোর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট কয়লা আমদানিতে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞা দেয় গত জুলাইয়ে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে কয়লা আমদানি অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে।
কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনগত বিষয়গুলো তাদের ঢাকা হেড অফিস থেকে দেখা হচ্ছে, তাই সেই বিষয়ে তারা জানেন না। তবে কয়লা না পেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই তাদের কাছে।
অপরদিকে এই বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে তারসহ মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরি নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৩১ আগস্ট একটি বার্জে করে পাচার করার সময় কয়েকটি কনটেইনার ভর্তি ১৫ কোটি টাকার বৈদ্যুতিক তার জব্দ করেছে নৌবাহিনীর একটি টিম। এ ঘটনায় এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ও এমডি আবুল কালাম আজাদ এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে নিয়ে প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।