‘সেচ মওসুমে ও গ্রীষ্মকালীন বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায়’ এস এস বিদ্যুৎকেন্দ্র
আধুনিক প্রযুক্তি ও নান্দনিক ডিজাইনে বঙ্গোপসাগরের কূলঘেঁষে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারা এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের মধ্যে বর্তমানে একটি ইউনিট থেকে দেশের সবচেয়ে সাশ্রয়ীমূল্যে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। আসন্ন সেচ মওসুমে ও গ্রীষ্মকালীন বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
চীনের বিখ্যাত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেপকো থ্রি ও এইচ টিজির কারিগরি সহায়তা নিয়ে ‘এসএস পাওয়ার’ নামের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি গড়ে তুলেছে এস আলম গ্রুপ। ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিট দিয়ে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এখন একটি ইউনিট থেকে ৪৫১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
এস এস পাওয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ এস এম আলমগীর কবির বলেছেন, বর্তমানে আমরা এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে সক্ষম। সঞ্চালন লাইনের সংকটের কারণে আমরা দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ রেখে প্রথম ইউনিট থেকে ৫০০ মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দিতে পারছি। আগামী এপ্রিলে সাব-স্টেশনের কাজ শেষ হলে পুরো বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে দেওয়া সম্ভব হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে পিডিবির সাবেক এ চেয়ারম্যান জানান, বর্তমানে ডিজেলচালিত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রায় ২৬ টাকা। সেক্ষেত্রে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ অনেক কম। এরমধ্যে দেশে সবচেয়ে কম মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ কছে এস এস পাওয়ার। বর্তমানে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ প্রায় ১২ টাকা পড়ছে।
পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে আলমগীর কবির বলেন, এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সম্পূর্ণরূপে পরিবেশবান্ধব। পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে এ কেন্দ্রটির প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) এবাদত হোসেন ভূঁইয়া জানান, বেসরকারি খাতের সবচেয়ে বড় এ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। প্রকল্পটিতে এস আলম গ্রুপের মালিকানা ৭০ শতাংশ এবং চীনা কোম্পানি সেপকো থ্রি ও এইচটিজির মালিকানা বাকি ৩০ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে উদ্বোধন করেন। গত বছর ১৮ সেপ্টেম্বর প্রথম ইউনিট এবং ২৬ অক্টোবর দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হয়।
সিএফও এবাদত হোসেন ভূঁইয়া দাবি করেন, আমরা এ পর্যন্ত আড়াই হাজার কোটি টাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ করছি।
বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির বিষয়ে এবাদত হোসেন বলেন, আমরা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা আমদানি করছি। প্রতিদিন পূর্ণ সক্ষমতায় চালাতে ১১ হাজার ৫০০ টন কয়লার প্রয়োজন। বছরে লাগবে ৪২ লাখ টন কয়লা।